ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার-প্রতিরোধে করণীয়
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার এবং প্রতিরোধে করণীয় বিষয় সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিত জানব। আপনাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানেন না আজকের আর্টিকেলটি শুধুমাত্র তাদের জন্য।
আজকের আর্টিকেলটিতে আপনারা জানতে পারবেন ডেঙ্গুজুরের লক্ষণ ও প্রতিকার এবং প্রতিরোধে করণীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে। এছাড়াও জানতে পারবেন ডেঙ্গু জ্বর কি ,ডেঙ্গু জ্বর হলে কি কি খাবার খাওয়া যায়, কি কি খাবার খাওয়া যায় না ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন।। তাই আজকের এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।পেজ সূচিপত্র: ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার এবং প্রতিরোধে করণীয়
- ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার
- ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিকার সমূহ
- ডেঙ্গু জ্বরের ঘরোয়া কিছু প্রতিকার
- ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে করণীয়
- ডেঙ্গু জ্বর কি: ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার
- ডেঙ্গু জ্বর হলে কারা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন
- এডিস মশা শরীরের কোথায় কামড়াই
- এডিস মশা চেনার উপায়
- ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে যেসব খাবার খাওয়ানো উচিত
- ডেঙ্গু জ্বর হলে যেসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত
- ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কিত জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন উত্তর সমূহ
- মন্তব্য: ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার এবং প্রতিরোধে করণীয়
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আমাদের সকলেরই জানা উচিত। কেননা এই রোগটি বর্ষাকালে ব্যাপক আকার ধারণ করে। ডেঙ্গু জ্বর হলো একটি মশা বাহিত ভাইরাস জনিত রোগ। ডেঙ্গু জ্বর হলে বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায় আক্রান্ত রোগীর বিশেষ কোন উপস্বর্গ বা লক্ষণ প্রথমবার পরিলক্ষিত হয় না। কিন্তু এটি ধীরে ধীরে যখন বেশি হয় তখন বোঝা যায় যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। তবে যারা দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হবেন তাদের ক্ষেত্রে ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ গুলো সহজেই পরিলক্ষিত হয়। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ সমূহ কি কি
আরো পড়ুন: খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
তীব্র জ্বর: আকস্মিক এবং উচ্চ মাত্রার জ্বর ডেঙ্গুর একটা বৈশিষ্ট্য। ক্ষেত্রে রোগীর জ্বর ১০২ থেকে ১০৫ ডিগ্রি ফেরেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে।
জয়েন্ট ও পেশীতে ব্যথা: পেশি এবং শরীরের জয়েন্ট গুলিতে তীব্র ব্যথার অনুভূত হয়। এইজন্য ডেঙ্গুকে কখনো কখনো ব্রেকবোন ফিভার বলা হয়।
চোখের পিছনে ব্যথা: চোখের পিছনে প্রচন্ড ব্যথা হয়।
বমি বমি ভাব এবং বমি: ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে বমি বমি ভাব হবে এমনকি বমিও হতে পারে।
ত্বকে ফুসকুড়ি: ডেঙ্গু জ্বরের আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ফুসকুড়ি এমনকি চুলকানি হতে পারে। এই ফুসকুড়ি বা চুলকানি বাহু ও পায়ে শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে শরীরে বাকি অংশ ছড়িয়ে পড়ে।
ক্লান্তি: শরীরে চরম ক্লান্তি এবং দুর্বলতা অনুভব হয়।
রক্তপাত: কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে যেমন নাক এবং দাঁতের মাড়ি থেকে হালকা রক্তপাত হতে পারে।
খুদা মান্দা ক্ষুদা: আক্রান্ত ব্যক্তির খোদা কমে যায় খাবার খেতে ইচ্ছা করে না।
স্বাদের পরিবর্তন: আক্রান্ত ব্যক্তি কোন কিছু খেলে সহজেই সে খাবারের স্বাদ পায় না তার মুখে স্বাদ হারিয়ে যায়।
ডেঙ্গু জ্বর হালকা থেকে অনেক গুরুতর হতে পারে এবং এর লক্ষণ গুলি মশাই কামড়ানোর চার থেকে দশ দিনের মধ্যে দেখা দিতে পারে। এই রোগটি ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বা ডেঙ্গু শখ সিনড্রোমে এ পরিণত হতে পারে এবং গুরুতর ক্ষেত্রে একটি জীবন হুমকির মধ্যে পড়তে পারে। গুরুতর অসুস্থতা লক্ষণ গুলোর মধ্যে রয়েছে তীব্র পেটে ব্যথা, অবিরাম বমি, দ্রুত শ্বাস, মাড়ি থেকে রক্তপাত, ক্লান্তি এবং অস্থিরতা। তাই এসব লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকে পরামর্শ নেওয়া।
ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিকার সমূহ
আমাদের শরীরে যে কোন রোগ বা রোগের কোন উপসর্গ দেখা দিলে সাথে সাথে নিকটস্থ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এ সময় ডাক্তারের নির্দেশনা ছাড়া ওষুধ খাওয়া উচিত নয় কেননা এ সময় নিজে কোন পদক্ষেপ নিতে গেলে অনেক সময় মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। তাই এ সময় রোগীকে সুরক্ষিত রাখতে নিজে কোন পদক্ষেপ না নিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রাথমিক চিকিৎসা এবং পরিচর্যা করা উচিত। চলুন জেনে নেয়া যাক ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিকার
- ডেঙ্গু জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল অথবা প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করতে পারবেন ।
- আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বরের মাত্রার ওপর নির্ভর করে ছয় থেকে আট ঘন্টা পর পর ওষুধ খাওয়াতে হবে।
- ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে একজন প্রাপ্তবয়স্ক রোগী দিনে চারটি ওষুধ নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে বেশি ওষুধ নিলে রোগের লিভারের সমস্যা ছাড়াও নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে।
- ডেঙ্গু জ্বরের আক্রান্ত ব্যক্তিকে জ্বর কমানোর জন্য গরম পানিতে কাপড় ভিজিয়ে শরীর মুছে দিতে হবে অথবা প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে গোসল করতে পারে।
- আক্রান্ত ব্যক্তিকে জ্বর কমানোর জন্য অ্যাসপিরিন অথবা ব্যথা নাশক ঔষধ কোনোভাবে ব্যবহার করা যাবে না কেননা এ সময় চিকিৎসকরা ব্যথা নাশক ওষুধ খেতে নিষেধ করেন।
- ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিরা বেশিরভাগ সময়েই ক্লান্ত অনুভব করে থাকেন এজন্য তাদের যথেষ্ট পরিমাণে বিশ্রাম নেয়া প্রয়োজন।
- এই সময় রোগীর ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্যে কোন বাড়ি কাজ বা পরিশ্রম করা উচিত নয়। তবে শুধু শুয়ে না থেকে আটা চলাফেরা করাটা উচিত।
ডেঙ্গু জ্বরের ঘরোয়া কিছু প্রতিকার
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকারের ঘরোয়া কিছু উপায় পরিলক্ষিত হয়। যেগুলো মেনে চললে ডেঙ্গু জ্বর থেকে বাঁচা যায় এবং সহজেই ডেঙ্গু রোগ আক্রমণ করতে পারে না। তাই ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে প্রত্যাকের কিছু প্রতিকার মেনে চললে ডেঙ্গু সহজে আক্রমণ করতে পারবে না। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক ডেঙ্গু জ্বরের ঘরোয়া কিছু প্রতিকার সমূহ
আরো পড়ুন : গর্ভাবস্থায় আমলকি খাওয়ার উপকারিতা
বাড়ির চারিপাশ পরিস্কর রাখতে হবে এবং কোথাও কোন পানি জমতে দেওয়া যাবেনা। কেননা জমে থাকা পানিতে মশারা বংশবিস্তার করে। গাছের টবে ফুলদানি এবং পড়ে থাকা গাড়ির টায়ারে জমে থাকা পানি ফেলে দিন অথবা পরিষ্কার করে ফেলুন। বাড়ির চারিপাশ অন্তত সপ্তাহে একদিন পর্যবেক্ষণ করুন এবং পরিষ্কার করে রাখুন।
ডেঙ্গু একটি মশা বাহিত রোগ তাই মশার হাত থেকে নিজে কে রক্ষা করতে হবে এবং পরিবারকে বাঁচাতে হবে।
ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী মশা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে এবং মানুষকে আক্রমণ করে। এই সময়টায় সবাইকেই একটু সতর্ক থাকতে হবে।
শরীর ঢাকা জামা কাপড় পরিধান করতে হবে যেমন লম্বা হাতা শার্ট অথবা টি শার্ট ফুল প্যান্ট জুতা মোজা ইত্যাদি পরিধান করতে হবে।
বাড়ির চারিপাশে মশা নিরোধক কেমিক্যাল যেমন পারমথ্রিন ব্যবহার করে বাড়ির আশপাশ পরিস্কার পরিছন্ন রাখতে হবে।
রাতে শোয়ার সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে। কেননা মশারি ব্যবহার না করলে এই মশা আক্রমণের সুযোগ পাবে বেশি।
ডেঙ্গু জ্বর থেকে যদি আপনি বাঁচতে চান তাহলে আপনাকে ঘরোয়া প্রতিকারগুলো অবশ্যই মানতে হবে কারণ এগুলো যদি নিয়মিত আপনি করতে পারেন তাহলে সহজেই আপনার আশেপাশে ডেঙ্গু জ্বরের মশা সহজেই জন্মাতে পারবে না এবং মশায় কামড়ানোর ভয় থাকবে না। এজন্য ডেঙ্গু জ্বর হওয়ার আগে থেকেই আপনাকে বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বরে প্রতিরোধে করণীয়
ডেঙ্গু একটি ভাইরাস জনিত রোগ । আর এই মশার একমাত্র বাহক এডিস মশা। যার চারটি প্রজাতির কামড়ে ডেঙ্গু জ্বর হতে পারে। সচেতনতাই ডেঙ্গু আক্রান্তের একমাত্র প্রতিরোধ। ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে আমাদের সকলকেই সচেতন থাকতে হবে ।ডেঙ্গু জ্বর যেহেতু ভাইরাস জনিত একটি রোগ এবং এটি এডিস মশা এই রোগের একমাত্র বাহক। তাই এডিস মশা যাতে আমাদের বাড়ির আশেপাশে জন্মাতে না পারে সে বিষয়ে সকলকে সচেতন থাকতে হবে এবং আমাদের বাড়ির আশপাশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
কেননা এই এডিস নামক মশা ডেঙ্গু জ্বর। আর এই ডেঙ্গু জ্বরের কারণে আমাদের অনেক সময় মৃত্যুর সাথেও লড়াই করতে হয়। তাই ডেঙ্গু জ্বর হওয়ার আগেই আমাদের ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিরোধে করণীয় কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে ।
ডেঙ্গু জ্বরের একমাত্র বাহক হচ্ছে এডিস মশা। আর এই এডিস মশা সাধারণত দিনের বেলায় কামড়ায়। তাই আমাদের দিনের বেলায় ঘুমাতে গেলে ও মশারি ব্যবহার করতে হবে অথবা কয়েল ব্যবহার করতে হবে যাতে মশাতে আক্রমণ করতে না পারে। ঘরের আনাচে-কানাচে এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গাগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে প্রয়োজনে মশা মারার স্প্রেও করতে পারেন।এডিস মশা সাধারণত পরিষ্কার পানিতে বংশবিস্তার করে থাকে। তাই বাড়ির আশেপাশে যাতে কোথাও পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। দুই তিন দিন পর পর বাড়ির আশপাশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
আমাদের বাড়িতে থাকা ফুলের টবে অথবা গাছের গোড়ায় জমে থাকা পানি ঘন ঘন পরিষ্কার করতে হবে এবং এমনকি দুই তিন দিন পর পর পানি পরিবর্তন করে দিতে হবে।
আপনার ঘরের জানালাগুলো মশা প্রতিরোধক নেট ব্যবহার করতে হবে। যাতে সহজেই বাইরের মশা ঘরে প্রবেশ করতে না পারে।
দিনে বা রাতে যখনই ঘুমোতে যান না কেন অবশ্যই অবশ্যই মশারি অথবা কয়েল ব্যবহার করতে হবে যাতে সহজেই মশা আক্রমণ করতে না পারে।
বাড়ির আশপাশ অথবা ঘরের ভেতর অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গাগুলো মশা নিধনের ওষুধ বা স্প্রে ব্যবহার করুন যাতে করে সে সব জায়গায় মশা লুকিয়ে থাকতে না পারে।
বিশেষ করে বাসার শিশু এবং বয়স্ক মানুষদের বিশেষ যত্নে রাখতে হবে কেননা এ সময় এরা আক্রান্ত হলে এদের অবস্থা খুবই মারাত্মক পর্যায়ে চলে যায়।
ভালো পোশাক পরিচ্ছেদ পরিধান করুন যেমন ফুল হাতা শার্ট প্যান্ট ইত্যাদি যেন আপনার শরীরটা ঢাকা থাকে এতে অনেকটাই আপনার জন্য উপকার হবে।
ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে অবশ্যই উপরক্ত বিষয়গুলো আমাদের মেনে চলতে হবে। তা না হলে সহজেই ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশা আমাদের আক্রমণ করে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত করতে পারে । তাই এ বিষয়ে সকলেরই সচেতন থাকা উচিত। কেননা প্রতিবছরে বর্ষাকালে আমাদের দেশে ডেঙ্গু জ্বরের প্রভাব বিস্তার করে।
ডেঙ্গু জ্বর কি : ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার
ডেঙ্গু জ্বর হচ্ছে ডেঙ্গু ভাইরাস জনিত একটি এডিস মশা বাহিত রোগ। ডেঙ্গু জ্বর এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণের ৩ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই সাধারণত ডেঙ্গু জ্বরের উপ স্বর্গ দেখা যায়। আর এই উপসর্গ গুলির মধ্যে রয়েছে তীব্র জ্বর, মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব, পেশিতে ব্যথা, ঘাড়ের পিছনে ব্যথা জয়েন্টে ব্যথা ইত্যাদি। এসব লক্ষণগুলি দেখা দিলে বুঝতে হবে যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। এবং দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ডেঙ্গু জ্বর হলে কারা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন
ডেঙ্গু জ্বর হলে বা ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ দেখা দিলে আমরা সাধারণত অনেক ভয় পেয়ে যাই । ভয় পাওয়ারি কারণ কেননা আমাদের দেশের প্রতিবছরে গ্রীষ্মকালীন সময়ে এই ডেঙ্গু জ্বরের পাদুর ভাব দেখা যায়। এমনকি অনেকে এই রোগে মৃত্যু হয়ে থাকে। তাই এই সময়টায় সকলেরই সচেতন থাকা উচিত যাতে সহজেই ডেঙ্গু মশা আক্রমণ করতে না পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ দেখা দিলে বা ডেঙ্গু জ্বর হলে কারা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন ।
ডেঙ্গু জ্বর হলে সাধারণত ১ বছরের নিচে এবং ৬৫ বছরের উপরে যারা রয়েছেন তারা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। এছাড়াও যারা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন তারা হচ্ছেন গর্ভবতী নারী, যাদের ওজন বেশি, যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, যারা হার্টের সমস্যায় ভুগছেন এবং যাদের নিয়মিত ডায়ালাইসিস করতে হয় তারা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। এবং এই সব রোগীদের ডেঙ্গু সংক্রমনের শুরু থেকে ডাক্তাররা হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
এডিস মশা শরীরের কোথায় কামড়য়
আমরা সাধারণত সকলেই জানি যে এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বর হয়ে থাকে। তাই অনেকেরই প্রশ্ন জাগতে পারে যে এডিস মশা শরীরের কোন অংশে কামড়ায়, কখন কামড়ায় কোথায় কামড়ায় এ ধরনের প্রশ্ন আসতে পারে। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক এডিস মশা শরীরের কোথায় কামড়ায়।
এই বিষয়ে অনেকেরই ধারণা বা অনেকেই মনে করেন যে এডিস মশা শুধুমাত্র পায়ে কামড় দেয়। কিন্তু এটা আসলে অনেকেরই ভুল ধারণা। কেননা পায়ের অংশ শরীরের অন্যান্য অংশের থেকে বেশি উন্মুক্ত থাকে বলে এই মশা পায়ের অংশটায় কামড় দেওয়ার জন্য বেছে নেই। তবে এমনটা নয় যে শুধুমাত্র পায়ে কামড় দেয়। এডিস মশা সুযোগ পেলে শরীরের যে অংশ ফাঁকা পাই সেখানে কামড় দিয়ে থাকে। শরীরের যেকোনো অংশে এডিস মশা কামড় দিতে পারেন তাই এ বিষয়ে সকলকেই সচেতন থাকতে হবে।
এডিস মশা চেনার উপায়
অনেকেই আছেন এডিস মশা চিনতে পারেন না আবার অনেকেই প্রশ্ন করেন যে এডিস মশা কেমন, কিভাবে চেনা যায়। তাই যারা এডিস মশা চিনেন না তারা এ ধরনের প্রশ্ন করে থাকেন যে এডিস মশা কেমন কিভাবে চিনব। চলুন তাহলে জেনে নিই কিভাবে এডিস মশা চেনা যায় ।
এই মশাটি সাধারণ মশার মতোই একটি মশা তবে একে চেনার বেশ কয়েকটি লক্ষণ আছে যেগুলো দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন যে এটি এডিস মশা। একটু লক্ষ্য করলেই যে কেউ ডেঙ্গুর জীবাণু বহন করে এডিস মশাকে খালি চোখেই চিনতে পারবেন কোন সমস্যা হবে না। এই মশা টি মাঝারি আকারের, সাদাকালো ডোরাকাটা দাগ আছে, এ মশার সুর গুলো লোমযুক্ত থাকে। এম মশার মাথা পেছনের উপরের দিকেও একটি সাদা দাগ থাকে, তাই সহজে আপনি সাধারণ মশা থেকে এই মশা আলাদা করতে পারবেন ।ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে যেসব খাবার খাওয়ানো উচিত
ডেঙ্গু জ্বর একটি ভাইরাসজনিত এবং মশা বাহিত রোগ। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সধারণ তিন থেকে ১৪ দিনের এর লক্ষণগুলো দেখা যায়, যার মধ্যে রয়েছে তীব্র জ্বর, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, মাংসপেশীতে ব্যথা, ঘাড়ের সংযোগস্থলে ব্যথা ইত্যাদি অনুভব হয়। তবে মাঝে মাঝে আক্রান্ত রোগীর ত্বকে র্যাস হতে পারে। এইসব লক্ষণগুলো দেখা দিলে সঠিক চিকিৎসার পাশাপাশি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সুষম ও পুষ্টিকর খাবার দিয়ে রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো উচিত।
তাই আক্রান্ত রোগীকে যেসব খাবার খাওয়ানো উচিত সেগুলো নিম্ন আলোচনা করা হলো
- রোগীকে প্রাথমিক অবস্থায় তরল খাবার গ্রহণ করা উচিত। কেননা শক্ত খাবারের তুলনায় তরল খাবার গ্রহণ করতে পারে। অল্প অল্প করে খাবার খেলে শরীর থেকে চলে যাওয়া পানি শূন্যতা সহজে পূরণ হয়ে যায় এবং একই সঙ্গে শরীরের তাপমাত্রা ও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- রোগীর অবস্থা কিছুটা ভালো হওয়ার দিকে থাকলে সহজে হজম যজ্ঞ খাবার যেমন খিচুড়ি, দই ,নরম ভাত ,সেদ্ধ আলু ,পেঁপে, কুমড়ো, সবুজ মটর ইত্যাদি খাওয়া উচিত।
- এ সময় আক্রান্ত ব্যক্তির মুখের স্বাদ অনেকটাই হারিয়ে যায় তাই সাদ বাড়ানোর জন্য লেবুর রস খাওয়ানো যেতে পারে। এর পাশাপাশি ফলের রস সুপ ডাবের পানি এজাতীয় তরল পান করানো উচিত। এগুলো শরীরের ইলেকট্রোলাইট ও পানি ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- পাকা পেঁপে, পাকা কলা এবং তরমুজ এর মত ফলগুলো খাওয়ানো যেতে পারে। রোগী যখন ধীরে ধীরে সুস্থতা অর্জন করবে তখন তাকে ধাপে ধাপে ধাপে স্বাভাবিক সময়ের মতো পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে।
- পালং শাক, আয়রন, পটাশিয়াম, ভিটামিন কে ইত্যাদি সমৃদ্ধ খাবারগুলো খাওয়ালে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই আক্রান্ত ব্যক্তিকে এসব খাবার দেওয়া উচিত।
- এ সময় শরীর অনেক দুর্বল এবং ক্লান্তি অনুভুত হয় হয় তাই শরীরে যথেষ্ট পুষ্টি দেওয়া উচিত। তাই পুষ্টিকর খাবার হিসাবে ডালিম এবং খনিজ সম্পৃক্ত ফল খাওয়ানো উচিত।
- ডেঙ্গু জ্বর এ আক্রান্ত রোগীকে বেশি বেশি কালো আঙ্গুর যা অ্যান্টি অক্সিজেন সমৃদ্ধ এবং রক্তের গঠনের জন্য সহায়ক একটি ফল। তাই এ সময় এটি বেশি পরিমাণে খেলে শরীরের জন্য অনেক উপকার পাওয়া যায়।
- ডেঙ্গু রোগীকে বেশি পরিমাণে বিট রুটের সুপ খাওয়াতে পারেন। এতে প্রচুর পরিমাণে পানি ভিটামিন খনিজ পদার্থ রয়েছে।
- ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিকে প্রচুর পরিমাণে ব্রকলি খাওয়াতে পারেন। কেননা ব্রকলিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে থাকে। তবে বেশি পরিমাণে মসলা দিয়ে রান্না করা উচিত নয় বরং সেদ্ধ করে খাওয়াই উচিত।
- পালং শাকের প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং ওমেগা থ্রি ভ্যাটিয়া এসিড পাওয়া যায় যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই এ সময় রোগীকে পালং শাক বেশি পরিমাণে গ্রহণ করলে শরীরের জন্য অনেক উপকার পাওয়া যায়।
ডেঙ্গু জ্বর হলে যেসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত
ডেঙ্গু জ্বর হলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে যে কোন খাবার খাওয়ানো উচিত নয়। অনেক কিছু মেনে চলতে হয় এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হয়। তা না হলে রোগী অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সুস্থ হতে অনেক সময় লেগে যায়। তাই এ সময় যে যেসব খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত সেগুলো হল
- আক্রান্ত রোগীকে অতিরিক্ত চিনি লবণ ও তেল মশলাযুক্ত খাবার না খাওয়ানোই ভালো বিশেষ করে বাইরের খাবার কোনভাবেই প্রযোজ্য নয়।
- চিনিযক্ত কোমল পানীয় বা বিভিন্ন ধরনের প্যাকেট জুস বর্জন করতে হবে কারণ এগুলো পেটের গন্ডগোল দেখা দিতে পারে এবং পেটের বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে তাই এগুলো থেকে সব সময় দূরে থাকতে হবে।
- অতিরিক্ত তেল ও মসলা জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে কারণ এতে হজমে সমস্যা হতে পারে।
- দুধ, চা ,কফি কিংবা ক্যাফেন জাতীয় খাবার পরিত্যাগ করতে হবে কেননা এ সময় পাকস্থলীর অবস্থা এমনিতেই খারাপ থাকে তাই এগুলো খেলে পাকস্থলী আরো দুর্বল হয়ে যেতে পারে এজন্য এসব খাবার পরিহার করা উচিত।
এ সময় রোগীর দ্রুত সুস্থতার জন্য পানীয় জাতীয় খাবার যেমন ডাবের পানি বিভিন্ন ধরনের ফলের জুশ এই জাতীয় খাবার দিতে হবে। এ সময় চেষ্টা করতে হবে অল্প পরিমাণে খাবার গ্রহণ করা এবং একটু পর পর ঘন ঘন খাবার খাওয়া। তাই অল্প পরিমাণে একটু ঘন ঘন খাবারটা খেলে রোগের শরীরে অনেক পুষ্টি পাবে এবং দ্রুত সুস্থতা ফিরে পাবে।
ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কিত জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন উত্তর সমূহ
১। ডেঙ্গু জ্বর হয় কোন মশার কামড়ে ?
উত্তর: এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বর হয়ে থাকে। এই মশা সাধারণত পরিষ্কার
পানিতে বংশবিস্তার করে । বাড়ির আশেপাশে জমে থাকা পানিতে ফুলের টবে কিংবা এসি বা
ফ্রিজের নিচে জমে থাকা পানিতে এই মশার উৎপত্তি হয়।
২। এ মশা কখন কামড়ায় ?
উত্তর: এই মশার বিস্তার ঘটে জুলাই থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত এই সময়টাতে
ডেঙ্গু জ্বরের প্রভাব খুব বেশি লক্ষ্য করা যায়। এই মশা সাধারণত দিনের বেলাতেই
কামড়ায় বিশেষ করে সকাল টাইম এবং সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে বেশি কামড় দেয়।
৩। ডেঙ্গু রোগ কত দিন থাকে ?
উত্তর: ডেঙ্গু রোগ সাধারণত চার থেকে দশ দিনের মধ্যে এর লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায়। এ কারণে ডেঙ্গু জ্বরের জটিলতা অনেকটাই বেশি হয়ে থাকে। ডেঙ্গু জ্বর হলে শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট এবং হারে প্রচন্ড ব্যথা অনুভূত হয়।
৪। ডেঙ্গু জ্বর হলে এই জ্বরের তাপমাত্রা কত থাকে?
উত্তর: ডেঙ্গু জ্বর হলে এটি শরীরের তাপমাত্রা প্রায় ১০২ থেকে ১০৫ পর্যন্ত
হয়ে থাকে। ডেঙ্গু রোগে প্রচন্ড জ্বর আসে শরীরের হাড় এবং মাংসপেশিতে
প্রচন্ড ব্যথা হয়ে যায়। ফলে শরীর দুর্বল হয়ে যায়।
৫। এডিস মশা সাধারণত কোথায় কামড়ায় ?
উত্তর: অনেকেই মনে করেন এটি শুধুমাত্র পায়ে কামড়াই কিন্তু আসলে এটা সত্যি নয় । এডিস মশা শরীরের যে অংশটি ফাঁকা পাই সে জায়গাতেই কামড়ায়। এটি শরীরের যেকোনো জায়গায় কামড়াতে পারে। তাই এই বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
আরো পড়ুন: আমলকি খাওয়ার উপকারিতা
মন্তব্য: ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার এবং প্রতিরোধে করণীয়
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার এবং প্রতিরোধে করণীয় বিষয়গুলো আপনারা অবশ্যই জানতে পেরেছেন। ডেঙ্গুচর একটি মারাত্মক ভাইরাস জনিত রোগ এ রোগের একমাত্র বাহক হচ্ছে এডিস মশা। এই রোগটি অনেক সময় আমাদের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই সকলকেই এ বিষয়ে সচেতন থাকা উচিত কেননা এ রোগটি একবার হয়ে গেলে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাই ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে সকলের উচিত সচেতন ভাবে চলা।
ডেঙ্গু জ্বর হলে বিশেষ করে ১ বছরের নিচের শিশুরা এবং ৬৫ বছরের উপরের বৃদ্ধ মানুষ যারা রয়েছে তারা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। কারণ এ সময় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে করণীয় বিষয়গুলো ভালোভাবে জেনে নিয়ে সেগুলো অনুযায়ী কাজ করা। আমাদের বাড়ির আশেপাশ পরিস্কার পরিছন্ন রাখা যাতে সহজেই কোথাও এডিস মশা জন্ম হতে না পারে।
আশা করি পোস্টটি আপনারা মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার এবং প্রতি রোধে করণীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। তাই এরকম তথ্য পেতে নিয়মিত আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। পোস্ট সম্পর্কিত কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকলে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। সবাই সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন এবং নিরাপদে থাকুন।
রয়েল; আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url