ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা-গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা
প্রিয় পাঠক আজকের এই আর্টিকেলটিতে আপনারা জানতে পারবেন ড্রাগন ফলের উপকারিতা এবং
গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। ড্রাগন ফল সম্পর্কিত
বিস্তারিত তথ্য জানতে আপনারা পোস্টটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
আজকের এই পোস্টটি থেকে আপনারা আরও জানতে পারবেন ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ, ড্রাগন
ফলের অপকারিতা, গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা, ড্রাগন ফলের খোসার
উপকারিতা এবং ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। পোস্টটি ভালোভাবে পড়লে আপনারা
আরো অনেক কিছু জানতে পারবেন তাই পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
পেজ সূচিপত্র: ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা
- ড্রাগন ফলের উপকারিতা: গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফলের উপকারিতা
- ড্রাগন ফলের অপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা
- ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ: ড্রাগন ফলের উপকারিতা
- ড্রাগন ফলের পরিচিতি
- কেন এই ফলের নাম ড্রাগন?
- ড্রাগন ফলের ইংরেজি ও বৈজ্ঞানিক নাম
- ড্রাগন ফল খেলে কি ওজন বাড়ে
- ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম
- ড্রাগন ফলের খোসার উপকারিতা
- ড্রাগন ফল সম্পর্কিত জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন-উত্তর সমূহ
- উপসংহার: ড্রাগন ফলের উপকারিতা এবং খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায়
ড্রাগন ফলের উপকারিতা
ড্রাগন ফলের উপকারিতা অনেক। ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে যা রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ড্রাগন ফলে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
যা ক্ষতিকর ফ্রি রেডিকেলস থেকে শরীরকে রক্ষা করতে সাহায্য করেন। এজন্য ড্রাগন
ফলের উপকারিতা অনেক। ড্রাগন ফল আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী একটি ফল। বর্তমানে
ফলটি অনেক পরিচিত একটি ফল। ছোট বড় সকলেই এই ফলটির সাথে বর্তমানে পরিচিত। কিন্তু
অনেকে আছেন যারা এর উপকারিতা সম্পর্কে এখনো জানেন না।
তাই বলছি আজকের আর্টিকেলটি
মনোযোগ সহকারে পড়ে জেনে নিন ড্রাগন ফলের উপকারিতা সমূহ
আরো পড়ুন: রাম্বুটান ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: ড্রাগন ফল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে
সাহায্য করে। ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে যার প্রতিরোধ ক্ষমতা
বৃদ্ধি করেন শুধু তাই নয় এতে থাকে এন্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের ক্ষতি কর ফ্রি
রেডিকেল শরীর থেকে বের করে দিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত এই
ফলটি খেলে আপনার শরীর সুস্থ এবং অনেক ভালো থাকবে
হজমে সহায়তা করে: ড্রাগন ফল আজম ও সহায়তা করে থাকে। ড্রাগন ফলে থাকে
ফাইবার যা হজম শক্তি উন্নত করে এবং হজমে সহায়তা করে থাকেন যার ফলে সহজেই
কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ হতে পারে না। জাপানে থাকে প্রতিও লাইটিং এনজাইম যা খাবার হজমে
সাহায্য করে। তাই এটি নিয়মিত খেলে শরীর সুস্থ থাকে।
হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে সাহায্য করে: ড্রাগন ফলে থাকা ফাইবার খারাপ
কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর মাধ্যমে হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে সাহায্য করে থাকে।
ড্রাগন ফল খেলে উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে
যায়। তাই প্রত্যেকেরই নিয়ম করে ড্রাগন ফল খাওয়া উচিত এতে আপনার হৃদযন্ত্র ভালো
থাকব।
ওজন কমাতে সাহায্য করে: ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। এই
ফলটি ওজন বজায় রাখতে এবং ওজন রাজ করতেও সহায়তা করে থাকেন এই ফলটিতে রয়েছে আশি
শতাংশ পানি। এই ফলটিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে যার ফলে এটি ওজন কমাতেও
সাহায্য করে থাকে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে: ড্রাগন ফলে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং
লাই ওপেন প্রোস্টেট যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে এবং ক্যান্সার ঝুঁকি কমাতে
সাহায্য করে থাকে। ড্রাগন ফল ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে আমাদের শরীরে সুস্থ
রাখতে সাহায্য করে।
ঘাড় ও দাঁতের জন্য উপকারী: ড্রাগন ফল আর ও দাঁতের জন্য অনেক উপকারী একটি
ফল। কেননা এই ড্রাগন ফলে রয়েছে ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম যা হাড় ও দাঁত
এরকম ঘনত্ব বৃদ্ধি করতে এবং হাড়ও দাঁত সুস্থ রাখতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করে থাকে।
তাই নিয়মিত ড্রাগন ফল খেলে আরও দাঁতের জন্য অনেক উপকার পাওয়া যায়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য: ড্রাগন ফলে বেশি পরিমাণে আজ থাকাই এই
ফলটি খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ অনেকটাই স্থিতিশীল স্থিতিশীল থাকে। ড্রাগন ফলে
থাকা ফাইবার রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে থাকে। তাই
নিয়মিত আপনার খাদ্য তালিকায় ড্রাগন থাকলে ডায়াবেটিসের সমস্যা থেকে সহজে মুক্তি
পাওয়া যেতে পারে।
ত্বক এবং চুলের জন্য অনেক উপকারী: ড্রাগন ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে
ভিটামিন সি যা ত্বক সতেজ রাখতে এবং ত্বকের বলে রাখা দূর করতে সাহায্য করে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বকের ক্ষতিরোধ করতে সাহায্য করে। ড্রাগন ফলের বেঁচে থাকে
ওমেগা থ্রি ফেটি অ্যাসিড যা চুলের জন্য অনেক উপকারী। তাই নিয়মিত ড্রাগন ফল খেলে
ত্বক এবং চুল সুস্থ সবল রাখা যায়।
দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি: ড্রাগন ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং বিটা
ক্যারোটিন যা রাতকানা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং চোখের দৃষ্টি শক্তি উন্নত
করতেও সাহায্য করে। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত নিয়মিত খাদ্য তালিকায় ড্রাগন ফল
রাখা।
রক্ত চলাচলে সাহায্য করে থাকে: বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে দেখা
যায় যে আয়রনের ঘাটতি। বিশেষ করে নারীদের মধ্যে এই সমস্যাটি বে বিশেষ করে লক্ষ্য
করা যায়। ড্রাগনে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। তাই নিয়মিত ড্রাগন ফল খেলে
অনেকটা আয়রনের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব। এইজন্য আমাদের নিয়ম করে ড্রাগন ফল খাওয়া
উচিত।
ড্রাগন ফলের অপকারিতা
ড্রাগন ফল একটা পুষ্টিকর ফল এর অনেক পুষ্টি গুনাগুন রয়েছে। যার জন্য এই ফলের
রয়েছে অনেক উপকারিতা। ড্রাগন ফলে অপকারিতা তার কথা বলতে গেলে খুবই কম। ড্রাগন
ফলের উপকারিতা চাইতে এর উপকারিতা অনেক বেশি। তবে যাই হোক যে কোনো ফলে পরিমাণ মতো
খাওয়া উচিত তা না হলে এটি শরীরে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। ড্রাগন ফল অনেক
খাবারের মতো এটি নির্দিষ্ট কিছু লোকদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে।
চলুন জেনে নেই এর কিছু অপকারিতা সম্পর্কে
এলার্জির প্রতিক্রিয়া: ড্রাগন ফল খেলে শরীরে এলার্জি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি
হতে পারে। তবে এটি সবার জন্য না কারো কারো জন্য ড্রাগন ফল এলার্জি প্রতিক্রিয়া
সৃষ্টি করতে পারেন যা প্রকাশ পায় শরীর চুলকানো , ফোলা, আম্বাত ইত্যাদি লক্ষণ ।
যাদের খাদ্য এলার্জি রয়েছে তাদের সতর্কতার সাথে ড্রাগন ফল খাওয়া উচিত।
পাচনতন্ত্রের সমস্যা: ড্রাগন ফল খেলে কিছু মানুষের পাচনতন্ত্রে সমস্যা হতে
পারে যা সাধারণত পেট ব্যথা বমি অতি অতিসারএবং পাচনতান্ত্রিক সমস্যা সৃষ্টি করতে
পারে।
গ্যাসের সমস্যা: কিছু কিছু মানুষ শ্রাবণ ফল খাওয়ার পর গ্যাসের সমস্যা
দেখা দিতে পারে সাথে সাথে বমি সমস্যা মাথা ব্যথা ইত্যাদি সমস্যা ও হতে
পারে।
পুরুষত্বের সমস্যা: কিছু কিছু পুরুষ রয়েছে যারা ড্রাগন ফল খাওয়ার পর
তাদের যৌন উত্তেজনা সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাই সবার ক্ষেত্রে
ড্রাগন ফল খাওয়া উচিত নয়।
গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা অনেক। ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি
উপাদান রয়েছেন যা একজন গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অনেক উপকারী। অনেক গর্ভবতী মা
রয়েছেন যারা গর্ব অবস্থায় ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকার গুলো এখনো জানেনই না। ড্রাগন
ফলে রয়েছে ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এটি রক্তের শর্করার মাত্রা
নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন
করে থাকে। বর্তমানে এই ড্রাগন ফলের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে ,যার জন্য এর
উৎপাদনে অনেক বাড়ছে। তাই আপনারা চাইলে সহজেই ড্রাগন ফল খেতে পারেন ।
চলুন জেনে নেয়া যাক গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফলের উপকারিতা সমূহ
আরো পড়ুন: গর্ভাবস্থায় লটকন ফল খাওয়ার উপকারিতা
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে
,আর ভিটামিন সি গর্ভবতী মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন করে থাকে। তাই গর্ভাবস্থায় কোন গর্ভবতী মহিলা ড্রাগন ফল খেলে তার শরীরের
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেড়ে যায়।
হজম শক্তি বাড়ায়: নিয়মিত ড্রাগন ফল খেলে গর্ভবতী মহিলাদের হজম শক্তির
বৃদ্ধি পায়। ড্রাগন ফল ফাইবার সমৃদ্ধ একটি ফল তাই এটি হজমে সাহায্য করে এবং
পরিপাকতন্ত্রকে ভালো রাখতে সহায়তা করে। তাই গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফল খেলে সহজেই
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হবে না।
আরো পড়ুন
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়: গর্ভাবস্থায় মহিলাদের অনেক পুষ্টিকর খাবার
খেতে হয়। আর এ সময় বিভিন্ন খাবার খেতে যে যে অনেক সময় ডায়াবেটিস জনিত সমস্যা
দেখা দেয়। যদি কোন গর্ভবতী মা নিয়মিত ড্রাগন ফল খায় তাহলে তার ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ড্রাগন ফলে থাকা শক্তিশালী ফাইবার শরীরের শর্করার
নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়: ড্রাগন ফল একজন গর্ভবতী মহিলার ক্যান্সারের
ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে যা শরীরের
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং আরো রয়েছে খনিজ পদার্থ ও
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা শরীর থেকে ক্ষতিকার জীবানু বের করে দিতে এবং ক্যান্সারের
ঝুঁকি কমাতে অনেকটাই সহায়ক।
হার্ট ভালো রাখতে সহায়তা: ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম বিদ্যমান
থাকে। আর এই পটাশিয়াম হৃদপিন্ডের রক্ত চলাচল ও অক্সিজেন সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে
সাহায্য করে। তাই গর্ভাবস্থায় নিয়মিত ড্রাগন ফল খেলে হৃদরোগ হওয়া সম্ভাবনা
অনেকটাই কমে যায়।
গর্ভে থাকা শিশুর হাড়ের বিকাশ ঘটে: ড্রাগন ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে
ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম যা গর্ভবতী মায়েদের গর্ভে থাকা শিশুর হাড়ের বিকাশ
ঘটাতে সাহায্য করে থাকে। তাই গর্ভবতী মহিলারা নিয়মিত ড্রাগন ফল খেলে ভ্রুনের
হাড়ের বিকাশ ঘটে।
শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটায়: ড্রাগন ফলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে
ক্যালসিয়াম পটাশিয়াম এবং বিভিন্ন খনিজ পদার্থ বিদ্যমান থাকায় গর্ভে গর্ভের
শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে। তাই প্রত্যেক গর্ভবতী মায়েদের
নিয়মিত ড্রাগন ফল খাওয়া উচিত।
রক্তশূন্যতা দূর করতে: গর্ভাবস্থায় মহিলাদের অনেক সময় রক্তশূন্যতার অভাব
দেখা দেয়। ড্রাগন ফলে রয়েছে ভিটামিন এ বিদ্যমান আর এই ভিটামিন এ গর্ভবতী মায়ের
শরীরের রক্ত উৎপাদনে সাহায্য করে থাকে। যার কারণে গর্ভাবস্থায় মহিলারা নিয়মিত
ড্রাগন ফল খেলে রক্তশূন্যতা জনিত সমস্যা সহজে দূর হয়ে যায়।
ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ
ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ রয়েছে। ড্রাগন ফলে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি
উপাদান রয়েছে যেমন ভিটামিন এ ভিটামিন সি খনিজ পদার্থ পটাশিয়াম ক্যালসিয়াম
ম্যাগনেসিয়াম বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ইত্যাদি। এগুলো শরীরের রোগ
প্রতিরোধ করে এবং শরীরের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে থাকে।
চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে
প্রতি ১০০ গ্রাম ড্রাগন ফলে যে পরিমান পুষ্টি উপাদান রয়েছে সেগুলো হল-
- পুষ্টি উপাদানের নাম। পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ
- ক্যালোরি -৬০গ্রাম ক্যালরি
- কার্বোহাইড্রেট -১৪ গ্রাম
- ফাইবার - ২ গ্রাম
- ভিটামিন সি -২৭%
- চিনি - ১২ গ্রাম
- প্রোটিন -২ গ্রাম
- চর্বি - ১ গ্রামেরও কম
- পটাশিয়াম - ৮%
- ম্যাগনেসিয়াম -১০%
- ভিটামিন বি ৬ - ১২%
- আয়রন - ০. ৬৫ মিলিগ্রাম
ড্রাগন ফলের পরিচিতি
ড্রাগন প্রাচীনকালের রূপকথার গল্পের এক ভয়ংকর শক্তিশালী প্রাণীর নাম। তবে এই
ড্রাগন রূপকথা বা গল্পকাহিনীর ড্রাগন নয় এটি হচ্ছে একটি ফলের নাম। এটি এক ধরনের
ফণীমনসা (ক্যাকটাস) প্রজাতির ফল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাবে এর মহাপ্রজাতি
হাইলোসিরিয়াস (অনেক মিষ্টি)। এক এক দেশে এক এক নামে অভিহিত করা হয় এই ড্রাগন
ফলকে। চীন দেশের লোকেরা এটিকে বলে ফায়ার ড্রাগন ফ্রুটস, ড্রাগন পার্ল স ফ্রুটস।
থাইল্যান্ডে ড্রাগন ক্রিস্টাল, ভিয়েতনামে সুইট ড্রাগন, ইন্দোনেশিয়া ও
মালয়েশিয়াতে ড্রাগন ফ্রুটস নামে পরিচিত। আর আমাদের বাংলাদেশে বলা হয় ড্রাগন
ফল।
কেন এই ফলের নাম ড্রাগন?
ড্রাগন গাছ দেখতে চির সবুজ এবং এর গায়ে কাটা কাটা থাকে অর্থাৎ দেখতে অনেকটা
ক্যাকটাসের মত। ড্রাগন ফল দেখতে অনেক আকর্ষণীয় এবং মনমুগ্ধকর। পাতাবিহীন এই ফলটি
দেখতে ডিম্বাকার লাল রঙের এমনকি সাদা রংয়ের হয়ে থাকে। ড্রাগন ফলের বাইরের খোসা
দেখতে রূপকথার ড্রাগনের পিঠের মতো। রূপকথার ড্রাগনের মতো এই ফলের খোসার কিছুটা
মিল থাকার কারণে একে ড্রাগন ফল বলা হয়ে থাকে।
ড্রাগন ফলের বৈজ্ঞানিক নাম
ড্রাগন ফলের অনেক নাম রয়েছে। ড্রাগন ফলকে একার দেশে এক এক নামে ডাকা হয়।
আপনাদের মধ্যে অনেকে আছেন যাতে জানার ইচ্ছা যে ড্রাগন ফলের ইংরেজি নাম বৈজ্ঞানিক
নাম কি। এজন্য আপনারা বিভিন্ন ওয়েবসাইটে গিয়ে ড্রাগন ফলের নাম খুজে থাকেন। তাই
আজকে এই ড্রাগন ফলের ইংরেজি নাম এবং বৈজ্ঞানিক নাম সম্পর্কে আপনাদের জানাবো। চলুন
তাহলে জেনে নেয়া যাক
আমাদের দেশে এই ফলটিকে বলা হয় ড্রাগন ফল এবং ইংরেজিতে বলা হয় ড্রাগন ফ্রুট
(Dragon fruit). বাংলায় এবং ইংরেজিতে এই ফলটির নাম প্রায় একই রকম শুধু ফলের
জায়গায় fruit বলা হয়। প্রতিটি ফলের একটি বৈজ্ঞানিক নাম থাকে সেই সূত্রে ড্রাগন
ফলের ও একটি বৈজ্ঞানিক নাম রয়েছে। ড্রাগন ফলের বৈজ্ঞানিক নাম হল( Hylocereus
undatus ).
ড্রাগন ফল খেলে কি ওজন বাড়ে
ড্রাগন ফল নিয়ে অনেকের মনে অনেক রকমের চিন্তাভাবনা জাগে। যে ছাগল ফল খেলে শরীর
মোটা হয়ে যাবে না শরীরে ওজন কমে যাবে এই নিয়ে অনেকে মন্তব্য করেন। ড্রাগন ফল
খেলে আপনার শরীর ভালো থাকবে কেননা ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি ও উপাদান
রয়েছে ড্রাগন ফল খেলে আপনার শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি পাবে। তবে ড্রাগন কলে
প্রচুর পরিমাণে উপস্থিত থাকলেও এতে ক্যালরির পরিমাণ খুবই কম। তাই এটি আপনার শরীর
মোটা হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এটি খেলে আপনার শরীরের ওজন ঠিক থাকবে। আপনি
যত বেশি পরিমাণে ড্রাগন খান না কেন আপনার শরীরের ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকবে
না।
শুধু তাই নয় ড্রাগন ফল খাওয়ার ফলে আপনাদের শরীরের মেদ দ্রুত ঝরতে শুরু করবে।
ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে যে কারণে এটি শরীরের ওজন সহজেই বাড়তে
দেয় না। তাই যারা শরীরের ওজন বেড়ে যাবে কিংবা মোটা হয়ে যাবে এই নিয়ে টেনশন
করছেন তাদের ভয়ের কোন কারণ নেই। আপনার নিঃসন্দেহে নিয়মিত ড্রাগন ফল খেতে পারেন।
নিয়মিত ড্রাগন ফল খাওয়ার ফলে আপনার ওজন ও নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং শরীর ঠিক
থাকবে।
ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম
ড্রাগন ফল কি আমাদের দেশীয় কোন ফল নই, এই ফলটি হচ্ছে বিদেশি। কিন্তু বর্তমানে
আমাদের বাংলাদেশে ড্রাগনের চাষ হচ্ছে। এই ফলটি অনেক সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর একটি
ফল। এই জন্য দিন দিন ড্রাগন ফলে চাহিদা বেড়েই চলেছে। ড্রাগন ফল প্রথমদিকে মানুষ
খেতে চাইত না কিন্তু বর্তমানে এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে আর বর্তমানে সবাই ফলটি
খেতে আগ্রহী। বর্তমানে ড্রাগন ফলটি খুবই সহজলভ্য এবং সবাই খেতেও পারছেন। চলুন
জেনে নেই কিভাবে খাবেন ড্রাগন ফল
প্রথমে আপনাকে বাজার থেকে ড্রাগন কিনে নিতে হবে অথবা আপনি ড্রাগনের বাগান থেকেও
ড্রাগন ফল সংগ্রহ করতে পারেন। এরপর ড্রাগন ফলটিকে ছুরি দিয়ে কেটে দুই ভাগ করে
নিতে হবে। এরপর এর ভেতরের সাদা অথবা লাল রঙের ফলটি আলাদা করে নিতে হবে।এরপর
ভেতরের লাল অংশটি ছুরি দিয়ে ফালাফালা করে কেটে একটি পাত্রে রেখে চামচ দিয়ে খেতে
পারেন।
আবার অনেকে আছেন ফলের জুস খেতে বেশ পছন্দ করেন। জুস করে খেতে হলে আপনাকে ফলটি
ছুরি দিয়ে কেটে ভাগ করে খোসাটি আলাদা করে ভেতরের অংশটুকু বের করে ব্লেন্ডারে
ব্লেন্ড করে নিয়ে ক্লাসে করে খেতে পারেন। এছাড়াও ড্রাগন ফল অনেকে অনেক ভাবে
খেয়ে থাকেন। অনেকে আবার সালাত হিসাবেও খেয়ে থাকেন।
ড্রাগন ফলের খোসার উপকারিতা
ড্রাগন ফলে অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে। ড্রাগন ফল আমাদের শরীরের জন্য অনেক
উপকারী। ড্রাগন ফল আমাদের শরীরের যেমন উপকারী ঠিক তেমনি ড্রাগন ফলের ঘসাও আমাদের
শরীরে অনেক উপকার করে থাকে। তাই ফোন থেকে খসাও ফেলে দেবার নয় বরং ফল এবং খোসা
দুটোই আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। ড্রাগন ফলের খোসা অনেক রোগের ঝুঁকি কমায়।
চলুন জেনে নেই ড্রাগন ফলের খোসা আমাদের কি কি উপকার করে থাকে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে ড্রাগন ফলের খোসা
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে থাকে
- ড্রাগন ফলের খোসা চুল ভালো রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন
- চোখের জ্যোতি বাড়াতে সাহায্য করে
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে
- হার্টের বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে
- পুরনো আলসার দুর্গত সাহায্য করে ড্রাগন ফলে খোসা
- ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে
- রক্তশূন্যতা দূর করতেও সাহায্য করে থাকে ড্রাগন ফলের খোসা
- ওজন কমাতে সাহায্য করে
- বয়সের ছাপ দূর করতেও সহযোগিতা করে ড্রাগন ফলের খোসা
ড্রাগন ফল সম্পর্কিত জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন উত্তর সমূহ
১। ড্রাগন ফল কি সবাই খেতে পারবে?
উত্তর: হ্যাঁ ড্রাগন ফল সবাই খেতে পারবে সব বয়সের মানুষই খেতে পারবে।
ড্রাগন ফলে কোন ক্ষতিকারক উপাদান নেই বরং এর রয়েছে অনেক উপকারিতা। তাই ছোট বড়
সকলের ড্রাগন ফল নিঃসন্দেহে খেতে পারবেন।
২। প্রতিদিন ড্রাগন ফল খেলে কি শরীরের ক্ষতি হবে?
উত্তর: অনেকেই মনে করতে পারেন যে প্রতিদিন ড্রাগন ফল খেলে শরীরের অনেক
ক্ষতি হবে। কিন্তু তা নয় ড্রাগন ফল প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদানে ভরপুর একটি
ফল। তাই শরীর সুস্থ সবল রাখার জন্য আপনি প্রতিদিন আপনার খাদ্য তালিকায় ড্রাগন ফল
রাখতে পারেন। এতে করে আপনার শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি পাবে।
৩। ড্রাগন ফল খেলে কি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে?
উত্তর: ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান রয়েছে। আর এই উপাদান
গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি উপাদান হচ্ছে ভিটামিন সি যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বৃদ্ধি করে শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে থাকে।
৪। ড্রাগন ফল খেলে কি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হয়?
উত্তর: ড্রাগন ফল কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে থাকে।
ড্রাগন ফলে থাকে ফাইবার যা হজম শক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিনের
সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
৫। গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফল খাওয়া কি নিরাপদ?
উত্তর: হ্যাঁ গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের ড্রাগন ফল খাওয়া নিরাপদ।
কেননা ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান রয়েছে। আর বিশেষ করে গর্ভবতী
মহিলাদের বিভিন্ন রকমের পুষ্টির সমস্যা দেখা দেয়। তাই আপনারা গর্ভাবস্থায়
ড্রাগন ফল খেলে সহজেই আপনারা ড্রাগন ফল থেকে পুষ্টি পেতে পারেন। তবে আপনি যদি
সমস্যা মনে করেন তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ড্রাগন ফল খাওয়া উচিত।
আরো পড়ুন: চালতার উপকারিতা ও অপকারিতা
উপসংহার: ড্রাগন ফলের উপকারিতা এবং খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায়
আশা করছি উপরের আলোচনা থেকে আপনারা অবশ্যই জানতে পারলেন ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও
অপকারিতা এবং গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফলের উপকারিতা সম্পর্কে। ড্রাগন ফলে প্রচুর
পরিমাণে পুষ্টি উপাদান রয়েছে। যেমন ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম,
ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও আয়রন। তাই এই ফলটি আমাদের
শরীরের জন্য অনেক উপকারী।
ড্রাগন ফল খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের অনেক উপকার পাওয়া যায় যেমন, ডায়াবেটিকসের
ঝুঁকি কমে যায়, রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ে, ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়, ওজন কমে
যায়, রক্তের শর্করা কমে যায়, হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে হজমে সাহায্য করে,
গর্ভে থাকার শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সহায়তা করে।
তবে ড্রাগন ফল আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী হলেও এটি বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত
নয়। পরিমাণ মতো খাওয়া উচিত। কেননা এটি বেশি পরিমাণে খেলে পেট ব্যথা ,গ্যাসের
সমস্যা এমনকি ডায়রিয়ার মত কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে । ড্রাগন ফলে অপকারিতার
চাইতে উপকারিতা বেশি পাওয়া যায়। আশা করি পোস্টটি পড়ে ড্রাগন ফল সম্পর্কে
বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। তাই এরকম তথ্য পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট
ভিজিট করুন এবং আমাদের সাথেই থাকুন। সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন।
রয়েল; আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url