জামের উপকারিতা ও অপকারিতা-জামেরপুষ্টিগুন সম্পর্কে জানুন

আজকের আর্টিকেল থেকে আমরা জানবো জামের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং জামের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। আপনাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা জামের পুষ্টিগুনাগুন এবং এর উপকারিতা অপকারিতা সম্পর্কে জানেন না বিধায় অনেকে জাম খেতে চান না।

জামের অনেক পুষ্টি গুনাগুন রয়েছে যে কারণে এটি আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এটি আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি সহ শরীরের অনেক সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। সুতরাং চলুন জাম সম্পর্কে  বিস্তারিত তথ্য গুলো জেনে নিন।

পেজসূচিপত্র: জামের উপকারিতা ও অপকারিতা

জামের উপকারিতা: জাম খাওয়ার অপকারিতা

গ্রীষ্মকালের সুস্বাদু ফল গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি ফল হচ্ছে জাম। গ্রীষ্মকালের অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি ফল হচ্ছে আম আর এই আমের সঙ্গে সঙ্গে চলে আসে জামের নামটিও। আর এই জামে রয়েছে অনেক ধরনের পুষ্টিগুণে ভরা। জামের উপকারিতা অনেক। জাম খেলে শরীরে অনেক ধরনের উপকার পাওয়া যায়। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক জাম খাওয়ার উপকারিতা সমূহ: 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: জাম খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। জামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আপনার সংক্রমণ এবং রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এই ফলটি যাদের হাঁপানি  ফ্লু , ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের জন্য এই ফলটি বেশ উপকারী।

রক্তের জন্য ভালো: জাম খেলে শরীরের রক্ত পরিষ্কার হয় অর্থাৎ জাম রক্ত বিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে। জামে রয়েছে ভিটামিন সি এবং আয়রন যা রক্ত বিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে এবং শরীরের টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে। যাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি এবং কম হিমোগ্লোবিন রয়েছে তারা নিয়মিত জাম খেতে পারেন। তাহলে এর থেকে অনেক উপকার পাবেন। 

ওজন কমাতে সাহায্য করে: জামে রয়েছে অনেক ফাইবার কিন্তু এতে ক্যালরির পরিমাণ অনেক কম রয়েছে। যার কারণে এটি শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটি অনেকটা মুখরোচক খাবার কিন্তু তৃপ্তি বাড়ায়, খুদা নিবারণ করে, এবং খুধা কমিয়ে রাখতে সাহায্য করে। 

ত্বকের জন্য উপকারী:  জাম ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। কারণ হচ্ছে জামে রয়েছে ভিটামিন এ, বি এবং সি আর এর পাশাপাশি এন্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরে ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। জাম খেলে কোলাজেন উৎপাদন বৃদ্ধি পায় যার ফলে ত্বক কমলীয় হয়ে ওঠে। তাই আপনি যদি ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে চান তাহলে বেশি বেশি জাম খেতে পারেন।

ডায়াবেটিস রোগীর জন্য: ডায়াবেটিস রোগীর জন্য জাম অনেক উপকারী। টাইপ টু ডায়াবেটিসের কারণে শ্রেষ্ঠ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা যেমন ঘন ঘন প্রস্রাব, গলা শুকিয়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে জাম। তাই যাদের ডায়াবেটিকস রয়েছে তারা বেশি বেশি করে জাম খান।

হজমে সাহায্য করে: জাম খেলে হজম শক্তি বাড়ে। জামে রয়েছে উচ্চ মাত্রার ফাইবার এবং যথেষ্ট পরিমাণে পানি যার ফলে এটি খেলে হজম শক্তি উন্নত হয় এবং অন্তের গতিবেধি নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য কর। এছাড়াও জাম খেলে পেটের বিভিন্ন সমস্যা সহজে দূর হয়ে যায়। 

মুখের স্বাস্থ্যের উন্নতি: জাম খেলে দাঁতের মাড়ির রক্তক্ষরণ এবং মাড়ির প্রবাহ যন্ত্র সমস্যা সহজে দূর করা যায়। জামের রস মাউথ ওয়াশ হিসাবে ও ব্যবহার করা যায়। জামের পাতায় রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা মুখের স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে সাহায্য করেন ।

ভিটামিন সি এর উপাদান: জামে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। এটি খেলে শরীরে ভিটামিন সি এর ঘাটতি পূরণ হয় এবং সেই সঙ্গে ভিটামিন সি এর অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে। এছাড়া মুখের দুর্গন্ধ, দাঁত মজবুত, দাঁতের মাড়ি শক্ত এবং দাঁতের মাড়ির ক্ষয় রোধ করতে সহায়তা করে থাকে। 

হার্ট ভালো রাখে: যদি আপনারা নিয়মিত জাম খান তবে এটি আপনার শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে এবং হার্ট ভাল রাখতে সাহায্য করবে। এছাড়াও জাম শরীরের দূষিত কার্বন ডাই অক্সাইড এর মাত্রা কমিয়ে দেহের প্রতিটা অঙ্গে অক্সিজেন পৌঁছে দিতে সাহায্য করে। তাই হার্ট ভালো রাখার জন্য জাম খাওয়া অনেক উপকার। 

জামের পরিচিতি 

জাম এর বৈজ্ঞানিক নাম হল (Syzygium cumini)। এর ইংরেজি নাম হল  Java plum, Jambul, Malabar plum. জাম এক এক দেশে এক এক নামে পরিচিত যেমন জাম্বুল,  জাম্বু, জাম্ভুল জাভা প্ল্যাম, যেমন জামুন, কালোজাম, কালো প্লান ইত্যাদি। ফিলিপাইনের জামকে বলা হয় ডুহাট আর তামিল ভাষায় জামকে বলা হয় লাভা আজহাম।

আমাদের বাংলাদেশ ফলের দেশ। বাংলাদেশে প্রায় ৭০ রকমের ফল জন্মে। এর মধ্যে অন্যতম একটি ফল হচ্ছে জাম। যা অনেকের কাছে সুপরিচিত এবং পুষ্টি ও ভেষজ গুণ সমৃদ্ধ একটি ফল। জ্যাম প্রায় সব ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে। তাই আমাদের সকলেরই জাম খাওয়া উচিত। 

জামের পুষ্টি উপাদান 

জাম একটি পুষ্টিকর ফল যা আমাদের শরীরে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে থাকে । জাম খেলে আমাদের শরীরে অনেক পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। জামে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে যেমন-ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, গ্লুকোজ, ভিটামিন সি, ভিটামিন এ ও ফাইবার। চলুন জেনে নেয়া যাক জামের পুষ্টি উপাদান গুলি 

প্রতি ১০০ গ্রাম জামে যে পরিমাণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা হল:

  • পুষ্টি উপাদান-     পরিমাণ 
  • ক্যালোরি -৬২ কিলোগ্রাম
  • চর্বি -০.১ গ্রাম
  • সোডিয়াম-২৮ মিলিগ্রাম
  • পটাশিয়াম-৫৫ মিলিগ্রাম
  • কার্বোহাইড্রেট-১৪গ্রাম
  • ডায়েটরি ফাইবার-০.৬ গ্রাম
  • চিনি-৮.৫ গ্রাম
  • প্রোটিন-০.৭ গ্রাম
  • ভিটামিন সি-১৪ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন এ-৯ মাইক্রগ্রাম
  • ক্যালসিয়াম-১৯ মিলিগ্রাম
  • আইরন-০.২৪ মিলিগ্রাম

জাম খাওয়ার অপকারিতা: জামের উপকারিতা 

জাম অনেক পুষ্টিকর ফল এবং এর অনেক পুষ্টি গুণ রয়েছে। তাই জামের উপকারিতা অনেক জামের যেমন উপকারিতা রয়েছে যেমন এর কিছু অপকারিতা ও লক্ষ্য করা । তবে এর উপকারিতা চাইতে এর উপকারিতা অনেক বেশি বরং এর অপকারিতা তেমন নাই বললেই চলে। এর অপকারিতা গুলো খুব কমই লক্ষ্য করা যায়। যাইহোক কিছু কিছু ক্ষেত্রে জাবের অপকারিতা লক্ষ্য করা যায় সেগুলো হল:

  • জামে অতিরিক্ত চিনি থাকে যার কারণে আপনার শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরির মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের সুগারের স্তর বৃদ্ধি করতে পারে। এটি মেটাবলিক স্যান্ডোম, ডায়াবেটিস,এবং ওজন বৃদ্ধির জন্য ঝুকি পূর্ন হতে পারে।
  • জাম খেলে জামের উচ্চমাত্রার চিনি আমাদের দাঁতের ক্ষতি করতে পারে এবং দাঁতের ক্ষতির অন্যতম উপাদান হতে পারে তাই বেশি পরিমাণে জাম না খাওয়াই ভালো।
  • কিছু জামে প্রেজারভেটিব বৈশিষ্ঠ অন্তর্নিহিত থাকতে পারে, যা অ্যালার্জির,পারস্টেটিক রিয়াকশন,গ্যাসের সমস্যা,আগ্নাশয়ের সমস্যা করতে পারে।

জামের বীজ খাওয়ার উপকারিতা 

জাম হচ্ছে একটি মৌসুমী ফল। আর এটি পুরো মৌসুমে খুব অল্প সময়ের জন্য পাওয়া যায়। জাম খেতে পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুব কমই রয়েছে। আমাদের শরীরের জন্য জাম অনেক উপকারী। তাই জাম খাওয়ার উপকারিতা অনেক। আমরা জাম খেয়ে অনেকেই জামের বীজ ফেলে দিই। কিন্তু আপনি কি জানেন জামের বীজ খেলে কি উপকার হয়? জানেন নাতো তাহলে  চলুন জেনে নেয়া যাক জামের বীজ খাবার উপকারিতা 

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেন: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে জামের বীজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে জামের বিজ খেতে পারেন। এজন্য প্রথমে জামের বীজগুলো গুড়া করে নিতে হবে। প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস পানিতে এক চা চামচ জামের বীজের গুড়া মিশিয়ে খেতে হবে। এভাবে কয়েকদিন খেলে আপনার সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। ফলের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। 

উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে: জামের বীজ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতেও সাহায্য করে। শরীরে উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে গেলে কিডনি, হার্ট, চোখ সহ বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতি হতে পারে। এজন্য উজ্জ্বল রক্তচাপ কমাতে আপনাকে জামের বীজ অনেক সাহায্য করতে পারে। জামের বীজের গুঁড়া মিশিয়ে পানি পান করলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং হৃদপিণ্ড ভালো রাখতেও সাহায্য করে ।

ওজন কমাতে সাহায্য করে: বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষই ওজন নিয়ে টেনশন করেন এবং ওজন কমানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেন। কারণ হচ্ছে মানুষের শরীরে ওজন বেড়ে গেলে শরীরের বিভিন্ন ধরনের অসুখ সৃষ্টি হয় যেমন ডায়াবেটিক, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায় ইত্যাদি। তাই আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা। আর এই ওজন কমাতে হবে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে। তাই নিয়মিত জামের বীজ খেলে শরীরের মেদ ঝরানো সম্ভব হয় এবং শরীরের ওজন কমে যায়। ফলে জামের বীজ ওজন কমাতেও সাহায্য করে থাকে। 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চাইলে প্রতিদিন নিয়মিত জামের বীজ খাওয়ার অভ্যাস করুন। সুস্থ থাকার জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো জরুরী। তাই প্রতিদিন সকালে জামের বীজের গুড়া মেশানো পানি পান করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, ফলে শরীরে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ফাঙাশের মতো জীবাণু সহজে আক্রমণ করতে পারে না। 

পেট ভালো রাখতে সাহায্য করে: বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে তারা পেটের সমস্যায় ভুগছেন যেমন গ্যাস, এসিডিটি, বদহজম সহ নানা ধরনের সমস্যা। আর এই পেটের সমস্যা দূর করার জন্য অনেকের নিয়মিতভাবে বিভিন্ন ওষুধ এবং গ্যাসের ওষুধ খেয়ে থাকেন। আর এতে করে শরীরের অনেক ক্ষতি হয় যেমন কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই আপনি চাইলে ঘরোয়া উপায় এসব সমস্যা সহজে দূর করতে পারেন। এজন্য আপনাকে নিয়মিত জামের বীজ এর গুড়া প্রতিদিন এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে সকালে খালি পেটে পান করতে হবে। তাহলে ভালো উপকার পাবেন। 

জামের বীজ খাওয়ার নিয়ম

জাম আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী শুধু তাই নয় জাম, জামের বীজ, জাম গাছের ছাল সবই আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। কিন্তু আপনারা কি জানেন জামের বীজ কিভাবে খেতে হয় এবং এর উপকার কতটুকু চলুন জেনে নেয়া যাক জামের বীজ খাওয়ার নিয়ম :

  • প্রথমে জাম গুলোকে সুন্দরভাবে ধুয়ে একটা পাত্রে রেখে জামের বীজ গুলোকে আলাদা করে নিতে হবে। 
  • এরপর জামের বীজগুলো ধুয়ে সুন্দর করে পরিষ্কার করে নিতে হবে যেন এর গায়ে আঁশ লেগে না থাকে। 
  • তারপর বীজ গুলোকে একটি পাত্রে নিয়ে তিন থেকে চার দিন ভালো করে শুকিয়ে নিতে হবে। 
  • এরপর শুকনো বীজ ভেঙে এর ভিতরের সবুজ অংশটি আবার ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।
  • এবার শুকনো বীজটি সিল পাটায় অথবা অন্য কোন মাধ্যমে ভালোভাবে গুড়া করে নিতে হবে। 
  • এরপর এই বীজের গুঁড়া গুলি সুন্দর একটা পরিষ্কার পাত্রে সংরক্ষণ করুন। তৈরি হয়ে গেল জামের বীজের গুড়া। 
  • এটি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক গ্লাস পানির সাথে এক চা চামচ গুড়া মিশিয়ে পান করুন। 

এভাবে জামের বীজ এর গুড়া সংরক্ষণ করে দীর্ঘদিন খেতে পারেন তাহলে আপনার শরীরের বিভিন্ন সমস্যা সহজে দূর হয়ে যাবে বিশেষ করে যারা পেটের সমস্যায় ভুগছেন তাদের অনেক উপকার হবে। তাই এর উপকারিতা পেতে আপনারা নিয়মিত জামের বীজের গুড়া খাওয়ার অভ্যাস করুন।

জাম গাছের ছালের উপকারিতা 

জাম যেমন আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী তেমনি জামের বীজ এবং জাম গাছের ছাল ও আমাদের শরীরের অনেক উপকার করে থাকে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে এ বিষয়গুলো আমরা অনেকেই জানিনা, যার কারণে এর ব্যবহার আমরা করি না এবং এর উপকারিতা পায় না। আমরা যদি সঠিকভাবে জামের বীজ এবং জাম গাছের ছাল সঠিকভাবে ব্যবহার করি তাহলে এর থেকে অনেক উপকার পাবো। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক জামের উপকারিতার পাশাপাশি জাম গাছের ছালের উপকারিতা সম্পর্কে

  • শরীরের কোথাও কোন ক্ষত সৃষ্টি হলে সেই ক্ষত যদি তাড়াতাড়ি না সারে তাহলে ক্ষতস্থানে জাম গাছের ছাল এর গুঁড়ো লাগিয়ে দিন দেখবেন খুব তাড়াতাড়ি শরীরের ক্ষত সেরে উঠেছে।
  • যদি কারো রক্ত পায়খানার সমস্যা থাকে তাহলে জাম গাছের ছালের রস এর সাথে কয়েক চামচ ছাগলের দুধ মিশিয়ে নিয়ে খেতে পারেন তাহলে খুব সহজেই রক্ত পায়খানা দূর হয়ে যাবে। 
  • অনেক বাচ্চাদেরই দেখা যায় পেটে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়। যার কারনে শরীর ভালো থাকে না। সে সকল বাচ্চাদের জাম গাছের ছালের গুড়ার সাথে ৫থেকে ১০ ফোঁটা গাওয়া ঘি এবং অল্প পরিমানে চিনি মিস করে খাওয়াতে পারেন তাহলে বাচ্চাদের পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়ে যাবে। 
  • যাদের দাঁতের সমস্যা রয়েছে যেমন দাঁত ব্যথা, দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া ইত্যাদি ।তারা জাম গাছের ছাল গুড়ো করে সেটি দিয়ে দাঁত মাজলে অনেক উপকার পাবেন।

কালো জামের উপকারিতা 

কালোজাম গ্রীষ্মকালীন ফল গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি জনপ্রিয় ফল। এই জান বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদানের সমৃদ্ধ এবং আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এই মিষ্টি রসালো ফলটি ছোটদের কাছেও খুব জনপ্রিয় একটি ফল। এই জান ত্বক চুল এবং সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক আলোচনের উপকারিতা সমূহ: 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: জাম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে জামে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি ও উপাদান রয়েছে যেমন ক্যালসিয়াম পটাশিয়াম আয়রন এবং ভিটামিন সি থাকেন যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এছাড়াও এটি শরীরের হারকে শক্তিশালী করতেও সাহায্য করে থাকে।

ডায়াবেটিকস কমাতে সাহায্য করে: কালোজাম ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করে থাকে। জাম ডায়াবেটিসের জন্য ভালো কাজ করে এটি বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে জামের বীজ রক্তের সুগার লেভেল 30% পর্যন্ত কমাতে সাহায্য করে। জামে ডায়াবেটিক্স বিরোধী গুণ রয়েছে যার কারণে এই ফলটি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। 

ক্ষত সারাতে সাহায্য করে: জাম গাছের বাকল পাতা ও বীজ ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। জামের এই উদ্ভিদে রয়েছে ম্যালিক অ্যাসিড ্যলিক এসিড অক্সালিক এসিড এবং তামিল থাকে তামিল টানিল থাকে। তাই শরীরের কোন জায়গায় খতর সৃষ্টি হলে জাম গাছের ছাল গুড়া করে ক্ষতস্থানে লাগালে সহজে ক্ষতস্থান দ্রুত সেরে যায়। 

ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে: জামে এবং জাম গাছে অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। জামের পুষ্টি উপাদান এবং জামের নির্যাস ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ফ্রী রেডিকেলের কাজ করেন এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। 

মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে: কালোজাম আমাদের শরীরের একটি সুখে টানটান রাখতে সাহায্য করে এবং ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে তারুণ দীপ্ত হতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয় কালো চাম ব্রেনের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। এছাড়াও জামে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও পানি রয়েছে যার কারণে ত্বককে স্বাস্থ্যবান করতে সাহায্য করে। 

পরিপাকে সাহায্য: জামে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি ও উপাদানউপাদান এবং এতে যথেষ্ট পরিমাণে পানি ও ফাইবার রয়েছে। তাই এটি পরিপাকেও সাহায্য করে থাকে। শুধু তাই নয় এটি শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে থাকে যেমন মুখের দুর্গন্ধ দাঁত ও মারিয়া শক্ত এবং মজবুত করতে এবং দাঁতের মাড়ি ক্ষয় রোধ করতেও সাহায্য করে থাকে।

গর্ভাবস্থায় জাম খাওয়ার উপকারিতা 

জাম একটি গ্রীষ্মকালীন এবং মৌসুমী ফল বলে এই ফলটি সারা বছর পাওয়া যায় না। এটি খুব কম সময়ে পাওয়া যায়। আর জাম খুব সুস্বাদু এবং এর পুষ্টি গুনাগুন অনেক। তাই কোন গর্ভবতী মহিলা গর্ভাবস্থায় জাম খেলে এর থেকে অনেক উপকারিতা পাবেন। কেননা জামে অনেক পুষ্টি উপাদান এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ রয়েছে । তাই গর্ভবস্থায় এটি খেলে শারীরিকভাবে এবং মানসিকভাবে অনেক উপকার হয়। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক গর্ভাবস্থায় জাম খাওয়ার উপকারিতা 

  • জামে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান এবং ক্যালসিয়াম রয়েছে যেমন ক্যালসিয়াম ভিটামিন সি আয়রন পটাশিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং হাড়কে শক্তিশালী করে। এজন্য গর্ভাবস্থায় এটি অনেক উপকারী। 
  • জানে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পটাশিয়াম রয়েছে যা গর্ভবতী মহিলাদের শক্তি যোগাতে এবং উচ্চ রক্ত চাপের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে। 
  • গর্ভবতী মহিলারা অনিয়মিত জাম খেলে গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন সমস্যা দূর করা যায় যেমন ডায়রিয়া এবং আলসার মত সমস্যা হলে জাম খেলে এর অনেক উপকার পাওয়া যায়। 
  • জামে ভিটামিন এ থাকে যার কারণে এটি গর্ভে থাকা শিশুর দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। 
  • জামে উচ্চ মাত্রার ম্যাগনেসিয়াম থাকে যার কারণে এটি ব্রণের বৃদ্ধি ও বিকাশে ব্যাপক সহায়তা করে থাকে।
  • জামে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকে যা দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধ করতে এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে থাকে।

জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন উত্তর সমূহ 

১। জাম খেলে কি কি উপকার হয়? 

উত্তর: জাম আমাদের শরীরের অনেক উপকার করে থাকে। জাম খেলে হজম শক্তি বাড়ে, জাম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে, জাম  ওজন কমাতে সাহায্য করে, জাম ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে, জাম দাঁত ও দাঁতের মাড়ির রক্তক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে। 

২। জাম খেলে কি রক্ত বাড়ে? 

উত্তর: জামে অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে জাম খেলে আমাদের শরীরের অনেক উপকার হয়। জামে ভিটামিন সি এবং আয়রনের ভরপুর থাকে যার কারণে এটি শরীরের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। আর রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়লে শরীরের রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়। আর রক্ত সঞ্চালন ভালো হলে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ভালোভাবে কাজ করে। 

৩। প্রতিদিন জাম খাওয়া কি খারাপ? 

উত্তর: প্রতিদিন জাম খাওয়া খারাপ নয় কিন্তু যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য সমস্যা। জাম হচ্ছে মিষ্টি জাতীয় এবং এতে চিনির পরিমাণ বেশি যে কারণে যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের অনেক সমস্যা হতে পারে। 

৪। জাম খেলে কি ওজন কমে? 

উত্তর: জামে প্রচুর পরিমাণে পানি এবং ফাইবার থাকে তাই এটি হজমের সাহায্য করে পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। এটি খেলে বেশিক্ষণ পেট ভরা থাকে যার কারণে খুদা কম লাগে। ফলে এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে। 

৫। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে কি জাম খাওয়া ভালো? 

উত্তর: জাম কোষ্ঠকাঠিন্যর রোগীদের জন্য অনেক উপকারী কেননা জামে প্রচুর পরিমাণে পাইবার ও পানি রয়েছে যা হজমে সাহায্য করে থাকে। ফলে মলত্যাগ সহজ হয়। তাই কষ্ট কাঠিন্য রোগীরা ও জাম খেতে পারবেন।

উপসংহার: গর্ভাবস্থায় জাম খাওয়ার উপকারিতা 

আজকের আর্টিকেল থেকে আপনারা জানতে পারলেন জাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জামের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। এছাড়াও জানতে পারলেন কালো জাম খাওয়ার উপকারিতা, গর্ভাবস্থায় জাম খাওয়ার উপকারিতা, জামের বীজ খাওয়ার উপকারিতা ইত্যাদি। জামের অনেক উপকারিতা রয়েছে আপনারা চাইলে যে কেউ চান খেতে পারেন তাহলে এর পুষ্টি গুনাগুন আপনাদের শরীরের জন্য অনেক উপকার করবে। এটি হচ্ছে একটা মৌসুমী ফল তাই আপনারা ইচ্ছা করলে যে কোন সময় খেতে পারবেন না তাই এটি যে সময় পাওয়া যায় সে সময়ই খাওয়ার চেষ্টা করুন। 

জাম গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অনেক উপকারী কেননা এতে অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে যেগুলো গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অনেক প্রয়োজন। আজকের আর্টিকেল টি সম্পর্কে আপনাদের যদি কোন মতামত বা কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। আর এ ধরনের তথ্যমূলক পোস্ট করতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন এবং আমাদের সাথেই থাকুন এবং পোষ্টটি  ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই শেয়ার করতে ভুলবেন না। সবাই সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

রয়েল; আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url