চালতার উপকারিতা ও অপকারিতা-গর্ভাবস্থায় চালতা খাওয়ার উপকারিতা
চালতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনারা অনেকেই জানেন না, আর না জানার কারণে আপনারা অনেকেই চালতা খান না। তাই যারা জানেন না তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি। তারা এই আর্টিকেল প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে চালতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
ঔষধি গুনাগুন সম্পন্ন একটি ফল চালতা। এই ফলে প্রচুর পরিমাণে পুষ্ট উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। তাই এই ফলটি খেলে আমাদের শরীর এর থেকে অনেক পুষ্টি উপাদান নিতে পারে। তাই বলা যায় গর্ভাবস্থায় চালতা খাওয়ার উপকারিতা অনেক।কেননা গর্ভাবস্থায় মহিলাদের অনেক পুস্টি প্রয়োজন পড়ে।
পেজ সূচিপত্র: চালতার উপকারিতা ও অপকারিতা
- চালতার পরিচিতি: চালতার উপকারিতা
- চালতার পুষ্টি গুনাগুন
- চাল তার উপকারিতা সমূহ
- গর্ভাবস্থায় চালতা খাওয়ার উপকারিতা সমূহ
- চালতার অপকারিতা সমূহ
- চালতা খাওয়ার নিয়ম
- চালতার আচার তৈরির নিয়ম
- উপসংহার : গর্ভাবস্থায় চালতা খাওয়ার উপকারিতা
- জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন উত্তর সমূহ
চালতার পরিচিতি
চালতা হচ্ছে একটি ফলের নাম। চালতা ফলের ইংরেজি নাম এলিফ্যান্ট আপেল এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম হল ডিলেনিয়া ইন্ডিকা ( Dillenia indica )। চালতা ফলের আদি জন্মস্থান হচ্ছে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায়। তবে এই ফলটি ভারত, চীন, ভিয়েতনাম, শ্রীলংকা, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় এই ফলটি সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। শহরের তুলনায় গ্রামে এই চালতা খুব সহজলভ্য এবং সুপরিচিত। চালতা ফলে অন্যান্য ফলের চেয়ে পুষ্টিগুণ অনেক বেশি থাকে।
গ্রাম বাংলার অতি সুপরিচিত ফল হল চালতা। চালতার গাছ মাঝারি আকারের এবং চিরহরিৎ জাতীয় গাছ। নানা ঔষধি গুনাগুনের ভরপুর এই চালতা ফলের দেখা মেলে বর্ষাকালে। এই ফলটি বর্ষার শেষের দিকে পাকতে শুরু করে। গ্রামবাংলায় এই ফলটি চাটনি, টক, আচার এবং ডালের সাথে মিশিয়ে খাওয়া হয়। চালতা ফল মূলত একটি অপ্রকৃত ফল, প্রকৃত ফল খাওয়া হয় না। এই ফলের খাওয়া হয় কেবল মাংসলবৃত্তি। মাংস বৃদ্ধির আড়ালে লুকিয়ে থাকে প্রকৃত ফল।
চালতার পুষ্টি গুনাগুন:
চালতা বেশ পরিচিত একটি ফল এই ফলটি ছোট বড় সকলের কাছেই অনেক প্রিয় । এই ফলটিকে আমরা চালতা নামে চিনে থাকি এটি একটি মৌসুমী ফল। এটি বর্ষাকালে ব্যাপক পরিমাণে পাওয়া যায় এ ফলটি মানব দেহের রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে। এই ফলটির পুষ্টি গুনাগুনের পাশাপাশি রয়েছে অনেক ভেষজ গুণ। এটি একটি টক জাতীয় ফল এই টক জাতীয় ফলটি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের আচার ও তৈরি করা যায়।
এই ফলটিতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান এবং ভেষজ গুণাগুণ রয়েছে এটি মানবদেহের
জন্য অনেক উপকারী ফল। যে মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে এবং
মানুষদের বিভিন্ন সমস্যা সমা ধান করে থাকে । এর অনেক পুষ্টি গুনাগুনের কারনে এটা
নিয়মিত খেলে শরীর সুস্থ থাকে এবং শরীরের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করতে সাহায্য করে
থাকে ।
এর পুষ্টি গুনাগুন ও এর উপাদান গুলো হলো- ক্যালসিয়াম, শর্করা, আমিষ এর
মত প্রয়োজনীয় উপাদান। এছাড়াও চালতাফলে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন বি,
ভিটামিন সি, থায়ামিন ও রিবোফ্লাবিন । এই ফলটি যেমন শরীরের রোগ প্রতিরোধের কাজ
করে তেমনি শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
চালতার উপকারিতা সমূহ:
চল তাই রয়েছে প্রচুর পরিমানে পুষ্টি উপাদান এবং ভেষজ উদ্ভিদ বটে। শান্তা রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি মিনারেল বিটা ক্যারোটিন এবং সামান্য পরিমাণ প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট। মানুষের শরীরে শুধু রোগ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে কেমনে পুষ্টিগুনেও এর ভূমিকা অপরিসীম। এই চালতা ফল শরীরের বিভিন্ন উপকার করে থাকে। তা নিঃসন্দেহ বলা যায় চলতা ফলের উপকারিতা অনেক। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক চালতার উপকারিতা সমূহ:
আরোপড়ুন: রামবুটান ফলের উপকারিতা
জ্বর ঠান্ডা ও কাশি নিরাময়: জ্বর ঠান্ডা ও কাশি নিরাময়ে চালতা গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে থাকে। চালতায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে যার কারনে জ্বর ,ঠান্ডা,কাশি নিরময়ে চালতার ভূমিকা অপরিসীম। চালতা গাছের ছাল গুড়ো করে খেলে কফ ও সর্দি ভালো হয়ে যায়। তাই আমরা বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে নিয়মিত চালতা খেতে পারি।
লিভার ও হার্ট সুস্থ রাখতে: চালতা ফল লিভার ও হার্টের টনিক হিসেবে কাজ করে। চালতা একটি উপকারী ফল। তাই লিভার ও হার্ট সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত চালতা ফল খেতে পারেন। এছাড়াও চালতা ফলে রয়েছে ক্যালসিয়াম শর্করা ও আমিষ যা শরীর সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই লিভার ও হার্ট সুস্থ রাখতে নিয়মিত চালতা খাওয়ার অভ্যাস করুন।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা: চালতা কোলেস্টরের মাত্রা কমিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে থাকে। যারা ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভোগেন তারা নিয়মিত চালতা খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কুসুম কুসুম গরম পানির সাথে চালতা রস মিশিয়ে খেয়ে নিন। এটি রক্ত পরিষ্কারক হিসেবে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও কাজ করবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা: চালতা হজম শক্তি বৃদ্ধিতে অনেক সহায়তা করে থাকে। যাদের হজমে সমস্যা বদহজম এবং কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা রয়েছেন তারা নিয়মিত চালতা খেলেন এর থেকে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। ডায়রিয়া ও বদহজম হলে ও চালটা খেতে পারেন তাহলে দ্রুত সেরে যাবে।
বাতের ব্যথা নিরাময় : বাতের ব্যথায় চালতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যাদের বাতের ব্যথা রয়েছে তারা চালতার কচি পাতার রস পানির সাথে মিশিয়ে খেলে ব্যথা অনেক কমে যায়। এছাড়াও হাড়ের সংযোগস্থলে ব্যথা হলেও চালতা পাতার রস খেতে পারেন এতে অনেক উপকার পাওয়া যাবে।
জরায়ু ও স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে: চালতা মহিলাদের জন্য অনেক প্রিয় একটি ফল। এই ফলটি মহিলাদের জন্য অনেক উপকারীও বটে। কারো কারো মতে চালতা গর্ভপাত পরবর্তী সমস্যাগুলো সমাধান করে থাকে। এমনকি এই চালতা ফল মহিলাদের জরায়ু ও স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ ও সাহায্য করে।
শুক্রাণু বৃদ্ধিতে সহায়তা: শুক্রাণু বৃদ্ধিতে চালতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যেসব পুরুষদের বীর্য ইস্খলন দুর্বলতা এবং শুক্রাণ স্বল্পতা রয়েছে তারা নিয়মিত চালতা খেতে পারেন। প্রতি ১০০ গ্রাম চালতাই ১৪০ কিলো ক্যালরি শক্তি থাকে যা শরীরের শক্তি হিসাবে কাজ করে। তাই নিয়মিত চালতা খেতে পারেন।
কিডনি ভালো রাখতে: কিডনি ভালো রাখতে এবং কিডনির বিভিন্ন সমস্যা দূর করার জন্য চালতা ফল খাওয়া অনেক উপকার । এছাড়াও যাদের স্কার্ভি রোগ, কৃমি এবং পাকস্থলীতে সমস্যা হলেও নিয়মিত চালতা খেতে পারেন। তাই নিয়মিত চালতা খেলে এর থেকে অনেক উপকারিতা পাবেনঅ
ত্বক সুস্থ রাখতে সহায়তা: চালতা ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে ত্বককে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। চালতাই প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান রয়েছে যেমন ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ও ভিটামিন সি। এ সকল উপাদান গুলো ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা এবং ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে। চালতার পাতার তেল ত্বক সংকোচনে এবং এর আঠা ত্বকের ক্ষত জনিত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
গর্ভাবস্থায় চালতা খাওয়ার উপকারিতা সমূহ
গর্ভাবস্থায় চালতা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। গর্ভাবস্থায় চালতা খেলে চালতাই থাকা পুষ্টি গুনাগুন গর্ভবতী মহিলার শরীরে প্রবেশ করে শরীরের অনেক উপকার করে থাকে। গর্ভাবস্থায় চালতা খেলে চালতা থেকে অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়। তবে গর্ব অবস্থায় চালতা খেলে তা নির্দিষ্ট পরিমাণে খেতে হবে তা না হলে উপকার চেয়ে ক্ষতি বেশি হতে পারে।
আরোপড়ুন: গর্ভাবস্থায় কচু শাকের উপকারিতা
যেকোনো জিনিস নির্দিষ্ট পরিমাণে খেলে এর মধ্যে থাকা পুষ্টি গুণাগুণ আপনার শরীরে
কাজে আসবে। আর যখন কোন জিনিস প্রয়োজনে তুলনা অনেক বেশি খেয়ে ফেলবেন তখন আপনার
উপকারের চেয়ে উপকারী বেশি হবে। তাই গর্ব অবস্থায় আপনি যখন চালতা খাবেন তখন
আপনাকে নির্দিষ্ট পরিমাণে খেতে হবে বেশি পরিমাণে খাওয়া যাবে না । কেননা এই
সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময়টা আপনাকে অনেক কিছু মেনে চলতে হবে। চলুন
তাহলে জেনে নেয়া যাক গর্ভাবস্থায় চলতা খাওয়ার উপকারিতা সমূহ:
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: গর্ভাবস্থায় চালতা খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় কেননা চালতা ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আর ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে থাকে। তাই এই ফলটি গর্ভাবস্থায় খেলে মা এবং শিশু উভয়েরই উপকার হয়।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে: গর্ভবতী মহিলাদের অন্যতম একটা সমস্যা
হচ্ছে কোষ্ঠকাঠিন্য। যা বেশিরভাগ মহিলাদের ক্ষেত্রেই রোগটি দেখা যায়। এটি শরীরের
বিভিন্ন রকমের সমস্যা এবং খাবার সঠিকভাবে হজম না হওয়ার কারণে এই সমস্যাটি দেখা
যায়। আর এই সমস্যাটি আপনি চালতা ফল খাওয়ার মাধ্যমেও দূর করতে পারেন। কেননা
চালতা ফল হজমে সাহায্য করে থাকে।
এন্টি ইনফ্লেমেন্টরি হিসেবে কাজ করে: গর্ভাবস্থায় মহিলাদের অনেক সমস্যা
হয়ে থাকে যেমন পা ফোলা এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফোলা ভাব দেখা যায়।
এছাড়াও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা অনুভব হয় এ ধরনের সমস্যা সমাধানে আপনি
নিয়মিত চালতা খেতে পারেন কেননা চালতায় রয়েছে এন্টি ইনফ্লেমেন্টরি উপাদান যা
আপনার শরীরে এই ধরনের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
হাইড্রেশন ও জলীয় ঘাটতি পূরণে সাহায্য করেন: গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী
মহিলাদের হাইড্রেশন ও জলীয় ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে থাকে । কেননা চালতাই রয়েছে
হাইড্রেশন ও জলীয় উপাদান।
চালতার অপকারিতা
চালতাই প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান রয়েছে যার কারণে এর উপকারিতা অনেক বেশি। এটি খেলে শরীরের অনেক পুষ্টি উপাদানের চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। যার কারণে চালতার উপকারিতা অনেক। আর এই উপকারিতার পাশাপাশি এর কিছু অপকারিতা ও লক্ষ্য করা যায়। এটি নির্দিষ্ট পরিমাণে খাওয়া উচিত বেশি পরিমাণে খেলে এটি শরীরের অনেক সমস্যা সৃষ্টি করে। তাই এটি পরিমাণ মতো খাওয়া উচিত এবং গর্ভাবস্থায় খেলে চিকিৎসরের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক চালতাব ফলের অপকারিতা সমূহ
- কিছু কিছু মানুষের এলার্জির সমস্যা রয়েছে যারা চালতা খেলে শরীরের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয় যেমন শরীর চুলকায়, শরীরের ছোট ছোট ফুসকুড়ি বের হয়,শরীররের বিভিন্ন জায়গা মোটা মোটা হয়ে যায়।
- চালতা বেশি পরিমাণে খেলে পেটে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়। এটা হজমের সমস্যা, পেট ব্যথা হওয়া কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া সম্ভবনা ইত্যাদি রোগ দেখা যায়।
- চালতা বেশিরভাগ মানুষই আচার বানিয়ে খেয়ে থাকেন। আর এই আচারে বিভিন্ন ধরনের মসলা দেওয়া থাকে। যার কারণে এর আচার খেলে অনেক মানুষের পেটে সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে যাদের আগে থেকে পেটে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা রয়েছে তারা এই আচার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে পারেন। তা না হলে আরো বেশি সমস্যায় পড়তে পারেন।
চালতা খাওয়ার নিয়ম
চালতা একটি পুষ্টিকর খাবার এর পুষ্টি গুনাগুন অনেক। এটি বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। অনেকে অনেক ভাবেই চালতা খেয়ে থাকেন। তবে চালতার আচার অনেক জনপ্রিয় খাবার হিসেবে পরিচিত। এটি মহিলাদের জন্য অনেক জনপ্রিয় খাবার। চালতার আচরণ অনেক টেস্টি এবং মজাদার হয়ে থাকে যার কারণে এটি অনেকের কাছেই একটি প্রিয় ফল।
তাই বেশিরভাগ মানুষ চালতার আচার বানিয়ে খেয়ে থাকেন। কেননা এর আচারটাই অনেক কাছে সুস্বাদু লাগে।চালতা আবার অনেকে তরকারির সাথে মিশিয়ে রান্না করে খেয়ে থাকেন। কেউ কেউ ডালের সাথে দিয়ে রান্না করে খেয়ে থাকেন।
চালতার আচার তৈরির নিয়ম
আচার খেতে পছন্দ করেন না এমন লোক খুব কমই আছেন। আসলে আসার একটা মজাদার খাবার। আবার অনেকেই আছেন যারা খিচুড়ির সাথে আচার অনেক বেশি পছন্দ করেন। বিশেষ করে আমার কথায় বলি আমি আচার খেতে অনেক পছন্দ করি। আমার বাসায় খিচুড়ি রান্না হলে এর সাথে যেকোনো আচার থাকতেই হয়। যেমন ধরেন আমের আচার, বড়ইয়ের আচার, চালতা আচার ইত্যাদির যেকোন টি থাকতেই হয়। খিচুড়ির সাথে আচার হলে খেতে অনেক ভালো লাগে এবং অনেক স্বাদ লাগে।
বিশেষ করে আমার মায়ের কথা বলি উনি আবার আচার তৈরি করতে বেশ পছন্দ করেন। যেমন ধরেন আমের সময় আমের আচার, বড়ই এর সময় বড়ই এর আচার, চালতার সময় চালতার আচার, জলপাই এর সময় জলপাইয়ের আচার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আচার করে বয়াম ভর্তি করে রেখে দেন। আর এগুলো অনেক দিন ধরে খাওয়া যায়।
তবে অনেকেই চালতার আচার সঠিক উপায় বানাতে পারেন না যার জন্য এটি খেতে সুস্বাদু এবং মজাদার হয় না। তাই আপনি চাইলে আজকের এই আচার বানানোর নিয়ম অনুসরণ করে ভালো স্বাদের আচার তৈরি করতে পারেন। তাহলে জেনে নেয়া যাক এর উপকরণ সমূহ:
চালতার আচার তৈরির উপকরণ সমূহ হলো-চালতা ২ টি, সরিষার তেল এক কাপ, লবণ এক চামচ, পাঁচফোড়ন ১ চা চামচ, পরিমাণ মতো তেজপাতা, সিরকা ১ টেবিল চামচ, শুকনো মরিচ ৫ ৬ টা, হলুদ গুঁড়া ১ চা চামচ, মরিচের গুঁড়া ১ চা চামচ, ধনিয়া গুরা এক চা চামচ, সরিষাবাডা এক চা চামচ, রসুন বাটা আধা চামচ , পরিমাণ মতো চিনি নিয়ে নিতে হবে।
প্রথমে চালতা পাতলা করে টুকরো টুকরো করে কেটে নিতে হবে এরপর চলতাগুলো হালকা ছেঁচে নিতে হবে। এরপর চালতাগুলো গরম পানিতে সামান্য হলুদ মিশিয়ে ভাব দিয়ে নিতে হবে। ভালোভাবে ভাব দেওয়া হয়ে গেলে গরম চুলায় প্যান বা করাই বসিয়ে তেল গরম করে নিতে হবে। গরম হলে তেজপাতা পাঁচফোড়ন হালকা ভেজে নিয়ে বাটা মশলা গুড়া মশলা সিরকা মিশিয়ে নাড়তে হবে।
মসলাগুলো কষা হয়ে গেলে ভাব দেওয়া চালতা গুলো মিশিয়ে নিন। এরপর এর সাথে চিনি ও গুড় দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়তে হবে প্রয়োজনে যদি লবণ লাগে দিতে পারেন। এভাবে কিছুক্ষণ নাড়তে থাকেন এবং চিনির পানি শুকিয়ে গেলে এর সাথে মরি ঘোড়া ও শুকনো মরিচ দিয়ে নেড়ে নামিয়ে নিন। ব্যাস হয়ে গেল চালতার আচার বানানো। এটি আপনি কাজের বয়ানে প্লাস্টিকের সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন। তবে মাঝে মাঝে আচার রোদে দিলে আচার ভালো থাকে এবং দীর্ঘদিন রাখা যায়।
উপসংহার
চালতা একটি বিশেষ ঔষধি গুল গুল সম্পন্ন ফল এবং ভেষজ উদ্ভিদ। এর পুষ্টি গুনাগুন অনেক। যে একটি মৌসুমী ফল এটি বর্ষা থেকে শুরু করে শীতকাল পর্যন্ত গাছে ধরে। চালতা গাছ বাংলাদেশের সব এলাকাতেই দেখা যায়। চালতা ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা অনেক। এর উপকারিতা সম্পর্কে অনেক মানুষেরই ধারণা কম যার কারণে খুব কম সংখ্যক মানুষই চালতা খেয়ে থাকেন। এই ফলের পুষ্টি উপাদান অনেক যার কারণে গর্ভাবস্থায় চালতা ফল খেলে এর থেকে অনেক উপকার পাবেন।
আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি থেকে আপনারা জানতে পেরেছেন যে চালতার কি চালতার পুষ্টি গুনাগুন চালতার উপকারিতা ও অপকারিতা, গর্ভাবস্থায় চালতা খাওয়ার উপকারিতা চালতা খাওয়ার নিয়ম, চালতার আচার বানানোর নিয়ম সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। তাই আপনার আশেপাশে যারা চালতা সম্পর্কে জানে না তাদেরকে এবং গর্ভবতী মহিলাদের কে সুস্থ ও সরল রাখার জন্য নিয়মিত কিসমিস খাওয়ার পরামর্শ দিন ।
উপরের পোস্ট টি তে কোন অংশ যদি আপনি বুঝতে না পারেন অথবা পোস্ট সম্পর্কিত কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। চেষ্টা করব উত্তর দেওয়ার জন্য। আমাদের এই সাইডে বিভিন্ন তথ্য সমৃদ্ধ পোষ্ট পাবলিশ করা হয়ে থাকে। তাই নিয়মিত সব তথ্য জানার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।
জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন উত্তর সমূহ
১। চালতা কি?
উত্তর: চালতা হচ্ছে একটি ফলের নাম। এর ইংরেজি নাম হচ্ছে এলিফেন্ট অ্যাপেল। এর জন্মস্থান হচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তবে বাংলাদেশ,ভারত, শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়ার, মালয়েশিয়ায় এই ফলটি বেশি পাওয়া যায়। এটি একটি মৌসুমী ।ফল এটি বর্ষাকালে বেশি পাওয়া যায়।
২। চালতার বৈজ্ঞানিক নাম কি?
উত্তর: চালতার বৈজ্ঞানিক হচ্ছে ডিলেনিয়া ইন্ডিকা (Dillenia indica) ।এটি এক রকমের ভারতবর্ষীয় উদ্ভিদ।
৩। চালতা কখন পাওয়া যায়?
উত্তর: চালতা হচ্ছে একটা মৌসুমী ফল। এটি বর্ষা মৌসুম এ পাওয়া যায়। চালতা বর্ষা মৌসুমীর শেষের দিকে পাকতে শুরু করে।
৪। চালতা পাতার রস খেলে কি হয়?
উত্তর: চালতা পাতার রস খেলে ঠান্ডা, জ্বর ভালো হয়, চালতা পাতার রস পানির সাথে মিশিয়ে খেলে বাতের ব্যথার অনেক উপকার পাওয়া যায়, এছাড়া রক্ত আমাশয় হলেও এর থেকে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
৫। চালতায় কি কি ভিটামিন রয়েছে?
রয়েল; আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url