চুলকানি বা খোসপচড়ায় নিম পাতার ব্যবহার -নিম পাতা খাওয়ার নিয়ম
পেজ সুচিপত্র:
- নিম পাতার পরিচিতি:
- চুলকানি বা খোসপচড়ায় নিমপাতার ব্যবহার:
- নিম পাতা খাওয়ার নিয়ম :
- নিম পাতার উপকারিতা সমূহ:
- রূপচর্চায় নিম পাতার ব্যবহার:
- উপসংহার:
নিম পাতার পরিচিতি:
নিম পাতা বা নিম এর বৈজ্ঞানিক নাম হল (Azadirachta indica)। নিম গাছ একটি ঔষধি গাছ যার ডাল, পাতা, রস, মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বহু উপকার সাধন করে থাকে। নিম গাছ একটি বহুবর্ষজীবী ও চিরহরিৎ বৃক্ষ । এই গাছ সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ ফুট লম্বা হয়ে থাকে। নিম গাছ প্রাপ্তবয়স্ক হতে প্রায় ১০ থেকে ১২ বছর সময় লেগে যায়। এই গাছ বাংলাদেশ এবং ভারত এর প্রায় সর্বত্রই দেখা যায়।
নিম গাছের পাতা, রস, ডাল অনেক ঔষধি হিসেবে ব্যবহার করা হয় এবং এই গাছের কাঠ দিয়ে আসবাবপত্র এবং এই গাছের কাঠ দিয়ে অনেক প্রসাধনী সামগ্রী তৈরি করা হয়। নিম গাছের কাঠ অনেক শক্ত এবং সহজে ঘুনে ধরে না, পোকাও ধরে না। যার জন্য অনেক বাদ্যযন্ত্র তৈরি করার জন্য এই গাছের কাঠ ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়াও প্রাচীনকাল থেকে বাদ্যযন্ত্র তৈরি করার জন্য এই গাছের কাঠ ব্যবহার করা হতো। নিমের গাছের এই গুনাগুনের কথা বিবেচনা করেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, এই নিম গাছকে- একুশ শতকের বৃক্ষ বলে ঘোষণা করেছেন।
চুলকানি বা খোসপচড়ায় নিমপাতার ব্যবহার:
নিম গাছ একটি ঔষধি গাছ। আর এর রয়েছে ঔষধি গুনাগুন। গাছের পাতা, শিকড়, ডাল, রস, বাকল ওষুধের কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার করা হয়। নিম পাতায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট , অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল, আন্টিফাঙ্গাল, আন্টিইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিভাইরাল উপাদান। এই উপাদানগুলি মানব দেহের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
মেডিকেল নিউজ টুডে তথ্য অনুযায়ী নিম একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আর এই নিম পাতায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, এন্টি মাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টিভাইরাল উপাদান থাকার কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। নিম পাতায় অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল, আন্টি ফাংগাল উপাদান থাকার কারণে এটি শরীরে ব্যবহার এর ফলে শরীরে জীবাণু ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সাহায্য করে। নিমপাতা ব্যবহার করে শরীরে চুলকানি অনেক কমে যায়।
আরো পড়ুন: কালোজিরা খাওয়ার ২০টি উপকারিতা
নিম পাতা বেটে এর পেস্ট তৈরি করে সমস্ত শরীরে ব্যবহার করলে চুলকানি অনেক কমে যায়। আবার নিম পাতার পেস্ট এর সাথে কাঁচা হলুদ মিশিয়ে নিয়মিত শরীরে মালিশ করলেও ভাল ফল পাওয়া যায়। চুলকানি আবার নিমের পাতা দিয়ে গোসল করলে চুলকানি কমে যায়। নিমের পাতা গরম পানিতে সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে গোসল করলে চুলকানি ভালো হয়ে যায়।
এছাড়া যাদের অ্যালার্জি রয়েছে তারা নিম পাতা গরম পানিতে দিয়ে সেই পানি দিয়ে গোসল করলে অ্যালার্জির সমস্যা দূর হয়ে যায়। এমনকি নিমের পাতা ভেজানো পানি মাথায় ব্যবহার করলে মাথার খুশকি সমস্যা দূর হয়, মাথার চুল পড়া বন্ধ হয়, মাথার উকুন দূর হয়ে যায়, মাথায় সৃষ্টি হওয়া ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়ে যায়। আবার যাদের চোখে সমস্যা চোখ চুলকায় তারা নিম পাতা পানিতে দিয়ে ১০ মিনিট সিদ্ধ করে সেই পানি ঠান্ডা করে চোখে পানি চামটা দিলে চোখে চুলকানি ভালো হয়ে যায়।
নিম পাতা খাওয়ার নিয়ম :
আমরা অনেকেই আছি যারা জানিনা যে নিম পাতা খেলে কি হয় নিম পাতা আমাদের জন্য উপকারী না ও অপকারি। আসলেই আমাদের জন্য অনেক উপকারী। যদি আমরা নিয়ম করে প্রতিদিন সকালে নিম পাতার রস খেতে পারি তাহলে নিম পাতার রস আমাদের রক্তে মিশে রক্তে গ্লোকুজের মাত্রা কমিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
নিম পাতা রস নিয়মিত খেলে আমাদের যাদের এলার্জি সমস্যা আছে তারাও অনেক উপকার পাবেন এই নিম পাতার রস খাওয়ার ফলে। নিমপাতা শুধু রস করেই না এটি অনেকভাবেই মানুষকে থাকেন। কেউ কেউ আছেন যারা নিমের কচি পাতাগুলো তেলেভাজা খেয়ে থাকেন । আবার নিমের পাতা পিসে বড়ি বানিয়ে থাকেন এই বাড়ি রোদে শুকিয়ে রেখে নিয়মিত ওষুধের মত করে খেয়ে থাকেন । এতে শরীরে অনেক উপকার হয়।
আরো পড়ুন: কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম
নিমপাতা অনেক ধরনের উপাদান থাকাই নিমপাতা শরীরে অ্যান্টিসেফটিক হিসেবে কাজ করে যা শরীরের জীবাণু ধ্বংস করতে সাহায্য করে। টানাএকমাস নিয়ম করে নিম পাতার রস খেলে শরীরে কোন রোগই সমস্যা করতে পারবেনা। নিম পাতায় অনেক এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান থাকায় এটি জীবাণু ধ্বংস করতে সহায়তা করে। ফলে সহজেই শরীরে রোগ জীবাণু বাসা হতে পারে না। নিম পাতায় অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল থাকায় নিম পাতার রস নিয়মিত খেলে তা চুলকানির জীবাণু ও ধ্বংস করতে সহায়ক হয়।
আমরা ওজন কমানোর জন্য নিম পাতা ব্যবহার করতে পারি। নিম পাতার রসের সাথে সামান্য পরিমাণ মধু মিশিয়ে খেলে ওজন কমানো সম্ভব। এছাড়া যাদের জন্ডিস আছে তারা নিম পাতার রসের সাথে মধু মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেলে জন্ডিস রোগ ভালো হয়ে যায়। নিমপাতা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনক উপকারী। তাই প্রতেকেরই নিয়ম করে নিমপাতা খাওয়া উচিত। তাই আমরা চেষ্টা করব সকলে নিমপাতা খাওয়ার জন্য।
নিম পাতার উপকারিতা সমূহ:
নিম পাতা অনেক উপকারী এবং এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। নিমপাতা রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল, আন্টিফাংগাল , আন্টিঅক্সিডেন্ট ,অ্যান্টিইনফ্লেমেন্টরি, অ্যান্টিভাইরাল উপাদান সমূহ যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই নিমপাতার উপকারিতা অনেক।এর কিছু উপকারিতা নিচে উল্লেখ করা হলো
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: নিমপাতায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ,এন্টিভাইরাল উপাদান থাকাই এটি মানবদেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ফলে সহজেই কোন রাগ শরীরে আক্রমণ করতে পারে না।
চর্মরোগ প্রতিরোধ: নিমপাতা চর্মরোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। নিমপাতায় আন্টিফাংগাল এবং এন্টি ব্যাকটেরিয়াল,আন্টি মাইক্রোবিয়াল উপাদান থাকায় এটির চর্ম রোগের জীবাণু ধ্বংস করতে সহায়তা করে। ফলে সহজেই শরীরে চর্মরোগ সেরে যায়।
দাঁতের সুস্থতা: নিম পাতা ব্যবহারের ফলে দাঁতের বা মুখের অনেক সমস্যা দূর হয়ে যায় যেমন দাঁতে পোকা লাগা, দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া, মুখে গন্ধ হওয়া ইত্যাদি থেকে রেহাই পাওয়া যায়। নিম গাছের ডাল অনেকে মেসওয়াক হিসেবে ব্যবহার করে যার ফলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়ে যায়।
লিভার এর সমস্যা: নিয়মিত নিম পাতার রস খেলে লিভারের অনেক সমস্যা দূর হয়ে যায়। যেমন পেট ব্যাথা, পেট ফাঁপা, পেটে কৃমি, বদ হজম ইত্যাদি সমস্যা হলে সহজেই তা দূর হয়ে যায়।
মাথার খুশকি: অনেক সময় অনেকেরই মাথায় খুশকি হয়ে থাকে যা সহজেই দূর করা যায় না। নিমপাতা ব্যবহারে ফলে তা সহজেই দূর করা সম্ভব। নিয়মিত নিয়মের রস মাথায় ব্যবহার করলে মাথার খুশকি সহজেই দূর হয়ে যায় এবং মাথার উকুন মরে যায় ফলে মাথা ঠান্ডা রাখতেও সহায়তা করে।
হেপাটাইটিস বি এবং সি: নিম পাতায় থাকে অ্যান্টিভাইরাল উপাদান চাহা হেপাটাইটিস বি এবং হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে।
ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ: ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে নিম পাতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। খালি পেট নিম পাতার রস নিয়মিত খেলে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে। নিয়ম করে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ চা চামচ নিম পাতার রস খেতে হবে।
পোকা-মাকড়ের কামড়: পোকা মাকড়ে কামড় দিলে বা অনেক পোকা বা মৌমছি আছে যে গুলো কামড় দিয়ে হুল ফুটিয়ে থাকে। সেক্ষেত্র নিমপাতার রস বা নিমপাতা বেটে লাগালে ব্যথা উপসম হবে ।
জন্ম নিয়ন্ত্রন: নিম পাতার তেল শক্তিশালি শুক্রানুনাসক হিসেবে কাজ
করে ।ভারতীয় বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখিয়েছেন যে, নিম পাতার তেল মহিলাদের জন্য
গর্ব নিরোধক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। নিম পাতা তেল এত শক্তিশালী যে ৩০ সেকেন্ডের
মধ্যে শুক্রাণু ধ্বংস করতে সক্ষম হয়।
অজির্নতা: অনেক মানুষ আছেন যারা দীর্ঘদিন ধরে পেটের সমস্যায় ভুগছেন যেমন পেট ফাপা,পাতলা পায়খানা তারা নিয়ম করে নিম পাতা রস সকাল বিকাল খেলে পেটের সমস্যা দূর করতে পারেন
উকুন নাশক: যারা দীর্ঘদিন ধরে মাথায় উকুনের সমস্যায় ভুগছেন তারা দুই তিন দিন নিমপাতা বেটে হালকা করে মাথা মেসেজ করে এক ঘন্টা রেখে মাথা ধুয়ে ফেলুন। দেখবেনে উকুন চলে গেছে।
কৃমি নাশক: অনেক ছেলে মেয়ে দেখা যায় যারা কৃমির কারণে রোগা হয়ে যায়, পেট ফুলে যায়, পেট বড় হয়ে যায় তাদের ক্ষেত্রে নিম গাছের মূলের গুড়া ৫০ মিলিগ্রাম সামান্য পানির সাথে মিশিয়ে কয়েকদিন খাওয়ালে পেটের কৃমি দূর হয়ে যাবে।
রূপচর্চায় নিম পাতার ব্যবহার:
নিম পাতা এমন একটি উপকারী এবং ঔষধি গুনাগুন সমৃদ্ধ পাতা যা মানুষের চুলকানিতে ব্যবহার হয় না রূপচর্চাতেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এজন্য নিমপাতা কে এন্টিসেফটিক হিসাবে ব্যবহার করা হয় । নিম পাতা মানুষের মুখের ব্রণ হলে ব্রণ দূর করার জন্য নিম পাতা ব্যবহার করা হয়। নিম পাতা বেটে এর সাথে কাঁচা হলুদ মিশিয়ে অনেকে মুখে ব্যবহার করে থাকেন। এতে করে মুখের ব্রণের সমস্যা দূর হয় মুখের দাগ দূর হয় এবং মুখের কোমলতা ফিরিয়ে আনে।
আরোপড়ুন: রোবট এর সুবিধা ও অসুবিধা
আবার যাদের মুখ তৈলাক্ত তারাও নিমপাতা বেটে মুখে লাগাতে পারেন অথবা নিমপাতার সাথে হলুদ মিশেও ব্যবহার করতে পারেন এতে অনেকটা তৈলাক্ত ভাব কেটে যায় এবং মুখের উজ্জ্বলতা ফিরে আসে। শুধু তাই নয় অনেকে গোটা শরীরে এই নিমপাতার সাথে কাঁচা হলুদ মিশিয়ে শরীরে মেখে শরীরের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে। তাই বলা যায় নিম পাতা শুধু চুলকানি বা খোসপচড়াতেই ব্যবহার করা হয় না বরং প্রসাধনী হিসাবে ও ব্যবহার করা হয়। নিম পাতার উপকারিতা অনেক এবং নিম পাতা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী একটি উপাদান।
উপসংহার:
প্রাচীনকাল থেকেই নিম পাতার প্রচলন চলে আসছে। মানুষ যে কোন সমস্যা হলেই মানুষ ওষুধি গাছ ব্যবহার করত। ওষুধি গাছ ব্যবহার করে তারা রোগ নিরাময় করত। কিন্তু বর্তমানে দেখা যায় ওষুধি গাছের কথা প্রায় আমরা ভুলেই যাই। আমাদের আধুনিকতার ছোঁয়া লাগাই আমরা বিভিন্ন ট্যাবলেট ,ক্যাপসুল ব্যবহার করে রোগ নিরাময় করে থাকি যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর। কিন্তু আমরা প্রাকৃতিক ভাবে যদি বিভিন্ন ওষুধি গাছ সম্পর্কে জেনে সেগুলো নিয়মিত ব্যবহার করি তাহলে আমাদের অসুক-বিশুক ভালো হবে এবং স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
আরোপড়ুন: রোবট এর ব্যবহার
তাই আমাদের বিভিন্ন ঔষধি গাছ সম্পর্কে জানতে হবে ওষুধি গাছের গুণাবলী সম্পর্কে জানতে হবে এবং পরিচর্যা করতে হবে যাতে সেসব গাছ আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে হারিয়ে না যায়, আমাদের কোন সমস্যা হলে সহজেই যাতে আমরা হাতের নাগালেই সেসব গাছ-গাছরা পেয়ে যায় এবং সেগুলো ব্যবহার করে রোগ নিরাময় করতে পারি। সেরকমই একটি গাছ হচ্ছে নিম যার ঔষধের গুনাগুন সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। তাই আমাদের উচিত এর ঔষধি গুনাগুন জেনে গাছ রোপন করা গাছের পরিচর্যা করা, যত্ন করা এবং যথাযথ ব্যবহার করা।
রয়েল; আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url