জুম্মার দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত -এবং জুম্মার দিনের আমল
আপনি যদি জুম্মা দিনের ফজিলত এবং এর আমল সম্পর্ক জানতে চান তাহলে এই আর্টিকেল টি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। চলুন দেরি না করে জম্মাদিনের ফজিলত সম্পর্কে জেনে নিন।
পেজ সূচিপত্র
- জুম্মার দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত:
- জুম্মার দিন শ্রেষ্ঠ হওয়ার কারণ :
- জুম্মার দিনের পাঁচটি আমল:
- জুম্মার দিনে যে সময় দোয়া কবুল হয়:
- জুম্মার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল :
- উপসংহার:
জুম্মার দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত:
জুম্মার দিন হচ্ছে একটি বিশেষ দিন আর জুম্মার নামাজ একটা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কেননা এই দিনে হযরত আদম (আ:) কে সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং এই দিনে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছিল,আর এই একই দিনে তাদের জান্নাত থেকে বের করে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছিল। আর সর্বশেষ কিয়ামত ও সংঘটিত হবে এই শুক্রবারে অর্থাৎ জুম্মার দিনে। জুম্মার দিন হলো সপ্তাহের সেরা দিন আর রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন,- জুম্মার দিন হল অন্যান্য দিনের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং তা আল্লাহর নিকট অধিক সম্মানিত।
জুম্মা দিনের ফজিলত এতই বেশি যে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে জুম্মা নামে একটি সূরা অবতীর্ণ করেছেন।
আরো পড়ুন: রোবট বা রোবটিক্র এর ব্যবহার সম্পর্কে
হযরত আবু হুরায়রা (রা:) তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত , নবিজী (সা:)সাল্লাম বলেছেন -,“পৃথিবীতে যতদিন সূর্য উদিত হবে তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন হল শুক্রবার ”।
জুম্মার দিন হল গুনাহ মাফের দিন ।রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি জুম্মার দিন গোসল করে উত্তম পোশাক পরিধান করবে, সুগন্ধি ব্যবহার করে নামাজে আসবে এবং ইমামের খুতবা মনোযোগ সহকারে শুনে জুম্মার নামাজ আদায় করে, তাহলে তার সেই আমল ওই জুম্মা থেকে আগামী জুম্মা পর্যন্ত তার সব সাগিরা গুনাহ আল্লাহ মাফ করে দিবেন।
সালাম ইরশাদ করেন জুম্মার দিনকে আল্লাহতালা মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন বানিয়েছেন
হাদীস শরীফে আছে, যদি কোন মুসলমান শুক্রবার রাতে কিংবা দিনে ইন্তেকাল করেন আল্লাহ তা'আলা তাকে কবরের আজাব থেকে রক্ষা করবেন।
শুক্রবার হচ্ছে মুসলমানদের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন সুতরং এই দিনে গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক।
জুম্মার দিন শ্রেষ্ঠ হওয়ার কারণ :
ইসলাম ধর্মে জুম্মার দিন শ্রেষ্ঠ এবং মর্যাদাপূর্ণ দিন। সব দিনের থেকে জুম্মার দিনটি শ্রেষ্ঠতম দিয়েছেন আল্লাহ তা'আলা । কুরআন ও হাদিসে এই দিনের বিশেষ সম্মান ও মর্যাদার কথা বলা হয়েছে।
- রাসূলুল্লাহ (সা:) জুম্মার দিনশ্রেষ্ঠ হওয়ার পাঁচটি কারণ উল্লেখ করেছেন।
- আল্লাহ তাআলা এই দিনে হযরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করেছেন।
- জুম্মার দিনে হযরত আদম (সা:) কে জমিনে পাঠিয়েছেন ।
- জুম্মার দিনে হযরত আদম (আঃ)সালামের মৃত্যু হয়েছে ।
- দএই দিনে এমন একটি সময় আছে যে সময় বান্দা দোয়া করলে দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
- আর এই জুম্মার দিনেই কেয়ামত সংঘটিত হবে।
জুম্মার দিনের পাঁচটি আমল:
১। নামাজ পড়া: জুম্মার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল হচ্ছে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া। হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এক জুম্মা হতে পরবর্তী জুম্মা, এক রমজান থেকে পরবর্তী রমজান মধ্যবর্তী সময় এর পাপ মোচন করে থাকে, যদি সেই ব্যক্তির কোন ধরনের কবিরা গুনাহ না থাকে। (মুসলিম হাদিস- ২৩৩)
পবিত্র কুরআনে সূরা আল জুমায় এরশাদ করা হয়েছে, হে মমিনগণ জুম্মার দিনে যখন আযান দেওয়া এটা হয় তখন তোমরা তোমাদের সকল প্রকার কাজ, বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বুঝ।
২। সূরা কাহাফ তেলাওয়াত করা: জম্মাদিনের আরেকটি অন্যতম আমল হচ্ছে
সূরা কাহাফ তেলাওয়াত করা। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে
ব্যক্তি জুম্মার দিনে সূরা কাহাফ তেলাওয়াত করবে তার জন্য দুই জুম্মা পর্যন্ত নুর
উজ্জ্বল করা হবে”।( হাদিস৯৫২ )
৩। দরুদ শরীফ পাঠ করা: জুম্মার দিনের অন্যতম একটি আমল হচ্ছে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা। মর্মে রাসূল (সা:) বলেন, তোমরা অধিক পরিমাণে দরুদ পাঠ করো কেননা তোমাদের দরুদ আমার সম্মুখে পেশ করা হয়ে থাকে। (হাদিস ১০৪৭)
৪। জিকির করা: জুম্মার দিন মসজিদে প্রবেশ করে বেশি বেশি জিকির করতে হবে ইবাদত করতে হবে এবং কোরআন তেলাওয়াত করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় কোন কথা বলা যাবে না। নবিজী (সাঃ) বলেন, “জুম্মার নামাজের খুতবার সময় তুমি যদি অন্য একজনকে চুপ থাকতে বলো তাহলে এটাও তোমার অনর্থক কাজ হবে”।
৫।বেশি বেশি দোয়া করা: জুম্মার দিনের আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে বেশি বেশি দোয়া করা । কেননা এই দিনে দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে । জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,- জুম্মার দিনে বার ঘণ্টার মধ্যে একটা বিশেষ মুহূর্ত আছে যে মুহূর্তে কোনো মুসলমান আল্লাহর নিকট দোয়া করলে আল্লাহ পাক দোয়া কবুল করেন।
জুম্মার দিনে যে সময় দোয়া কবুল হয়:
জুম্মার দিন হল সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন। মুসলমানদের জন্য এই দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক এক বর্ণনায় এক এক সময়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তবে জুম্মার দিনে দোয়া কবুলের বিশেষ সময় কোনটি সেটা নিয়ে মতানৈক্য থাকলেও দোয়া কবুল হওয়ার ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন জুম্মার দিনে এমন একটি সময় আছে যে সময়টায় যদি কোন মুসলিম নামাজ আদায়রত অবস্থায় থাকে এবং আল্লাহর কাছে কিছু চাই আল্লাহ অবশ্যই আল্লাহ তার সে চাওয়া কবুল করবেন। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু ওলাইহি অসাল্লাম তার হাত দিয়ে ইশারা করে সময়টির সংক্ষিপ্ততার ইঙ্গিত দেন।
আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রাদিয়াল্লাহু তা'আলা বর্ণনা করেন- “শুক্রবারে আসরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দোয়া কবুল হয়”।
সিরাত গ্রন্থে বর্ণিত আছে যে, জুম্মার দিন আসরের নামাজ আদায় করে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়।
জুম্মার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল :
জুম্মার দিন হল সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ মর্যাদাপূর্ণ একটি দিন এই দিনে নামাজই সর্বশ্রেষ্ঠ আমল ।আল্লাহ তাআলা এই দিন নামাজের ব্যাপারে বিভিন্নভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, হে ঈমানদারগণ যখন জুম্মার দিন নামাজের জন্য আহবান করা হবে ,তখন তোমরা দ্রুত আল্লাহ স্মরনের জন্য উপস্থিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় বর্জন করো। এটি তোমাদের জন্য কল্যাণকর যদি তোমরা উপলব্ধি করো।
প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে আদায় করা ফজিলত পূর্ণ। আর শুক্রবারে ফজরের নামাজ জামাতের সাথে পড়া আরও ফজিলতপূর্ণ। হাদিস শরীফে এরশাদ হয়েছে ,আল্লাহর কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ নামাজ হলো জুম্মা বারের ফজরের নামাজ। যা জামাতের সাথে আদায় করা হয়।
আরো পড়ুন: কালোজিরার ব্যবহার ও এর উপকারিতা সম্পর্কে
রাসূলুল্লাহ বলেছেন জুম্মার দিনে মসজিদের দরজায় ফেরেশতারা অবস্থান করেন এবং ক্রমানুসারে আগে আগমনকারীদের নাম লিখতে থাকেন। যে সবার আগে আসে সে ওই ব্যক্তির মত যে একটা উট কুরবানী করে ,এরপর যে আসে সে ওই ব্যক্তি ন্যায় যে একটা গাভী কুরবানী করে। এ পর যে আগমন করেন সে একটা বকরি দানকারীর মত। এরপর যখন ইমাম সাহেব আসেন এবং খুতবা দেওয়ার শুরু করেন তখন ফেরেশতাগণ তাদের লেখা বন্ধ করে দেন এবং মনোযোগ সহকারে খুতবা শুনতে থাকেন। ( বোখারী, হাদিস, ৯২৯)।
উপসংহার:
আমার দিন মুসলমানদের জন্য অন্যতম একটা গুরুত্বপূর্ণ এবং ফজিলতপূর্ণ দিন মহান রাব্বুল আলামিন মহান আল্লাহ তা'আলা সৃষ্টির পূর্ণতা দান করেছেন এই দিনে। তাই শুক্রবার তথা জুম্মার দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক। আমাদের প্রত্যেক মুসলমানদেরই এদিনের গুরুত্ব ফজিলত সম্পর্কে জানা উচিত এবং নিয়ম মেনে তো পালন করা উচিত।
রয়েল; আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url